বন্দরের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে আগামীকাল শুক্রবার রাত ২ টা ৮ মিনিট থেকে  শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমী স্নানোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের পাপমোচনে স্নানোৎসব শেষ হবে আগামীকাল শনিবার রাত ১২ টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত।

স্নানোৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূণার্থীদের নিরাপত্তা বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে লাঙ্গলবন্দ  স্নানোৎসব এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো.

জাহিদুল ইসলাম মিঞা। 

ইতিমধ্যে স্নান এলাকায় ২০ টি স্নান ঘাটলায় কাপড় পাল্টানো, চিকিৎসা সেবায় ভ্রাম্যমান কেন্দ্র,  শৌচাগার,  বিশুদ্ধ পানি সরবারাহ, ও পূণার্থীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজার সদস্যরা। স্নান এলাকায় টহলে থাকবেন সেনাবাহিনী, র‌্যাব, ব্রহ্মপূত্র নদে টহলে থাকবে নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড।

জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন,  আগত পূর্ণার্থীদের সুবিধার্থে ১৬০ টি শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে। স্নান এলাকায় নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।  সিসিটিভির পাশাপাশি  পর্যবেক্ষণের জন্য থাকবে ড্রোন।  পূর্ণার্থীদের নিরাপত্তা জোর লাঙ্গলবন্দ  জুড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

কথিত আছে,  তৃতা যোগে অতীতে জমদগ্নি মহামুনির রেনুকা নামে এক রাজবংশীয় পরমাসুন্দরী স্ত্রী ছিল। তাদের ছিল পাঁচ পুত্র। সর্বকনিষ্ঠের নাম ছিল পরশুরাম। ঘটনাক্রমে মার্তিকাবর্ত দেশের রাজাকে সস্ত্রীক জলবিহার করতে দেখে আশ্রমবাসিনী রেণুকা কামস্পৃহ হয়ে পড়েন এবং নিজের পূর্ব-রাজকীয় জীবন সম্পর্কে স্মৃতিবিষ্ট হন। 

মুনি স্ত্রীর এই আসক্তি দেখে ক্রোধান্বিত হয়ে পাঁচ পুত্রকে তাদের মাতাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কোন পুত্রই মাতৃহত্যার মতো নিষ্ঠুর কাজ করতে রাজি হলো না। তখন মুনি তার প্রিয় পুত্র পরশুরামকে আদেশ দিলে পরশুরাম এক কুঠারের আঘাতে মাকে হত্যা করেন। মাকে হত্যা করে পরশুরাম পরম পাপী হিসেবে চিহ্নিত হন। 

পাপের শাস্তি হিসেবে কুঠারটি তার হাতে আটকে থাকে। শত চেষ্টা করেও তা থেকে তিনি মুক্ত হতে পারলেন না। তখন পিতা তাকে বিভিন্ন তীর্থস্থানে গিয়ে পাপমুক্ত হতে বলেন। মাতৃহত্যার ভয়াবহ পাপের অনুশোচনা নিয়ে তিনি তীর্থ থেকে তীর্থে ঘুরে বেড়ান।

দেবতা ব্রহ্মপুত্র তখন হিমালয়ের বুকে হ্রদরূপে লুকিয়ে ছিলেন। দৈবক্রমে পরশুরাম ব্রহ্মপুত্রের মাহাত্ম্যের কথা জানতে পারেন। তিনি খুঁজে পেলেন হিমালয়ে লুক্কায়িত ব্রহ্মপুত্র হ্রদ এবং প্রার্থনা জানালেন যেন এর পবিত্র জলে তার পাপ মুক্ত হয়। 

তিনি হ্রদের জলে ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে আটকে থাকা কুঠারখানা খসে পড়ে। এভাবে তিনি মাতৃহত্যার প্রায়শ্চিত্ত থেকে মুক্ত হলেন। ব্রহ্মপুত্রের এই অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন পাপহরণকারী জল যাতে সাধারণ মানুষের উপকারে আসে এ উদ্দেশ্যে পরশুরাম সেই জলধারাকে সমতল ভূমিতে নিয়ে আসার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। 

তিনি কুঠারখানা লাঙলের ফলকে বেঁধে সেই ফলক দিয়ে নালা সৃষ্টি করে ব্রহ্মপুত্রের পবিত্র জলধারাকে সমতল ভূমিতে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ সময় ও পথ পরিক্রমায় পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে তিনি ব্রহ্মপুত্রের জলধারাকে বিভিন্ন জনপদ ঘুরিয়ে অবশেষে বর্তমান লাঙ্গলবন্দে এসে ক্লান্ত হয়ে থেমে যান এবং লাঙল চষা বন্ধ করে দেন। 

তার লাঙলের ফলকে তৈরি পথ ধরে ব্রহ্মপুত্র প্রবাহিত হতে থাকে। সেই থেকে এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ এবং তা হয়ে ওঠে হিন্দুধর্মের মানুষের জন্য পরম পুণ্যস্থান। এরপর থেকে পবিত্র ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়  তীর্থস্থানে পাপ মোচনের ভাসনায় ভ্রমণে আসেন লাঙ্গলবন্দে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ল ঙ গলবন দ স ন ন ৎসব পরশ র ম

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ মিনারবাড়ি-লাঙ্গলবন্দ সড়কের ৬টি পয়েন্টে সংস্কার

অতি বৃষ্টির কারণে বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের মিনারবাড়ি থেকে লাঙ্গলবন্দ সড়কের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে খানা খন্দের সৃষ্টি হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা সহ যানবাহন বিকল হয়ে যাত্রী ও চালকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন।

জনদুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে এসেছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। তিনি তার ব্যক্তি উদ্যোগে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মিনারবাড়ি থেকে লাঙ্গলবন্দ সড়কের মিনারবাড়ি, মুছাপুর স্ট্যান্ড, ঋষিবাড়ি, প্রেমতলা, ডিস্টিক বোর্ড ও লাঙ্গলবন্দ স্ট্যান্ডের সন্নিকটে ৬টি স্পটে ইট ও বালু ফেলে সড়কের সংস্কার কাজ করেছেন। এতে দুর্ভোগ কমেছে ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ ও গাড়ি চালকদের।

অটো চালক কবির হোসেন (২৭) বলেন, অনেক দিন ধরে এই রাস্তার অনেক জায়গায় গর্তের সৃস্টি হয়েছে। গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। আবার যাত্রীরা ঝাকুনিতে কস্ট পায়। সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ সাহেব আজকে (মঙ্গলবার) গর্তগুলো মেরামত করে দিয়েছেন। এইটা একটা ভালো কাজ।

এলাকাবাসী জানায়, একের পর এক ব্যক্তিগত অর্থায়নে রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ণমূলক কাজ করে এলাকায় সুনাম কুড়াচ্ছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ মাকসুদ হোসেন।  যেখানেই সমস্যা ও জনদুর্ভোগ, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন তিনি ও তার তার সহধর্মিনী বিশিষ্ট সমাজসেবিকা নার্গিস মাকসুদ। 

এলাকাবাসী আরও জানায়, জনদুর্ভোগ কমাতে অতি সম্প্রতি বন্দরের নবীগঞ্জ স্ট্যান্ড থেকে মিনারবাড়ি সড়ক ও ধামগড় ইউনিয়নের ইস্পাহানী বাজার থেকে চাঁন মার্কেট পর্যন্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ পৃথক ২টি সড়কের সংস্কার করেন মাকসুদ হোসেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ মিনারবাড়ি-লাঙ্গলবন্দ সড়কের ৬টি পয়েন্টে সংস্কার