‘নন স্টপ’ ক্রিকেটে নেই দম ফেলার ফুরসত
Published: 4th, April 2025 GMT
সিলেট-চট্টগ্রামে এ মাসের দুই টেস্টের জিম্বাবুয়ে সিরিজটাকে বলতে পারেন অ্যাপেটাইজার। এরপর মেইন ডিশ এবং সেটি এতটাই বিশাল থালা সাজিয়ে আসবে যে ক্রিকেটাররা খেলতে খেলতে দম ফেলার সুযোগ পাবেন না।
২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বিস্তৃত বর্তমান ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনাতেই (এফটিপি) খেলার বন্যা, আছে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। ‘ননস্টপ ক্রিকেট’-এর ঠাসা এই সূচিতে সুচ ঢোকানোরও আর জায়গা নেই। বাংলাদেশ দলের জন্য ভীষণ ব্যস্ত এই সময়টা শুরু হয়ে যাচ্ছে আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়েই।
খেলার সংখ্যা দিয়েই বোঝানো যাক ব্যস্ততাটাকে। ২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত বর্তমান এফটিপির বাকি সময়ে বাংলাদেশ দল পরপর দুই মাস খেলাবিহীন থাকবে শুধু এ বছরের ডিসেম্বর ও আগামী বছরের জানুয়ারিতে। বাকি সময়টাতে এক মাসের বেশি ফাঁকা সময় নেই কখনোই। দুই বছরের কম এই সময়ে বাংলাদেশ দল শুধু দ্বিপক্ষীয় সিরিজই খেলবে ১৬টি।
এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ, অর্থাৎ টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সবই আছে, এমন সিরিজ তিনটি। তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজ পাঁচটি, দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে হবে একটি সিরিজে। এফটিপি অনুযায়ী ১৬টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার কথা মোট ১৮টি, ওয়ানডে ৩২টি ও টি-টোয়েন্টি ৩২টি।
এর বাইরে এ বছরের সেপ্টেম্বরে আছে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগামী দুটি বড় আসর টি-টোয়েন্টি সংস্করণের বলে এর আগে ২০ ওভারের ক্রিকেটেই জোর দেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
আরও পড়ুনক্রিকেট খেলে কত আয় করেন তাসকিন, অন্যরা কত২৯ মার্চ ২০২৫মে মাসে পাকিস্তান সফরের ৩ ওয়ানডে ও ৩ টি-টোয়েন্টির সিরিজটি যেমন দুই বোর্ডের সমঝোতায় রূপান্তরিত হচ্ছে ৫ টি-টোয়েন্টির সিরিজে। এফটিপিতে নতুন ঢোকা আগামী জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজটিও হবে ৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।
ব্যস্ত এই সময় বাংলাদেশ দল পার করবে ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়া ফিল সিমন্সের অধীন। ২০২৭ বিশ্বকাপ অবশ্য চলতি এফটিপির মধ্যে পড়েনি। বর্তমান এফটিপি শেষ হবে ২০২৭ সালের মার্চে; আর দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপ হওয়ার কথা সে বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে। বিসিবিও পরিকল্পনা সাজাচ্ছে এফটিপি ছাপিয়ে আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে চোখ রেখে।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান নাজমূল আবেদীন এ নিয়ে প্রথম আলোকে কাল বলেছেন, ‘সামনে আমাদের অনেক খেলা। সেগুলোসহ ২০২৭ বিশ্বকাপ মাথায় রেখেই আমরা এগোব। পরিকল্পনা নিয়ে কিছু প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ৮ এপ্রিল কোচ ঢাকায় এলে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
ক্রিকেটে টানা খেলার চাপ মানেই কঠিন ও ক্লান্তিকর সময়। আবার এ-ও ঠিক, সব সংস্করণ মিলিয়ে এমন টানা খেলার সুযোগ সব সময় পায় না বাংলাদেশ দল। নাজমূল আবেদীন এটাকে তাই একটা সুযোগ হিসেবেই দেখছেন, ‘এত খেলা তো আমরা সব সময় পাই না, এবার পাচ্ছি। এটাকে চাপ না ভেবে একটা সুযোগ হিসেবে নিতে চাই। বোর্ডের দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে ২০২৭ বিশ্বকাপের আগের সময়টায় জাতীয় দল ও “এ” দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারকে খেলার সুযোগ দিতে। সব খেলায় একই খেলোয়াড় না খেলিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে। নতুনদের সুযোগ দেওয়ার এটা একটা দারুণ সুযোগ।’
এফটিপি অনুযায়ী আগামী ২৩ মাসে ১৬টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার কথা মোট ১৮টি, ওয়ানডে ৩২টি ও টি-টোয়েন্টি ৩২টি।টানা খেলা থাকবে বলে ক্রিকেটারদের চোটমুক্ত রাখার স্বার্থেই বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর নীতিতে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। পর্যাপ্তসংখ্যক খেলোয়াড় যেন যেকোনো সময়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকতে পারেন, লক্ষ্য রাখতে হবে সেদিকেও। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান অবশ্য জানিয়েছেন, জাতীয় দলে খেলোয়াড় সরবরাহের ধারা ঠিক রাখতে ‘এ’ দল ও হাই পারফরম্যান্স দলের খেলা বাড়ানোয় গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনবিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে গেলেন মাহমুদউল্লাহ, বাকিরা কে পাবেন কত টাকা১০ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৭ স ল র ল দ শ দল ব শ বক প বছর র এফট প
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ