লাঙ্গলবন্দে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্লানোৎসব শুরু
Published: 5th, April 2025 GMT
শুক্রবার মধ্য রাত থেকে বন্দরের লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুইদিন ব্যাপি অষ্টমী স্নানোৎসব। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ৭ মিনিটে স্লানের লগ্ন শুরু হয়।
লগ্ন শুরুর পরই তীর্থস্থানের ২০টি স্নান ঘাটে পূর্ণ্যাথীদের ঢল নামে। হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র , হে লৌহিত্য , আমার পাপ হরণ করো”। এই মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা , ধান দুর্বা , হরিতকি , ডাব, আমপাতা পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন তীর্থ যাত্রীরা।
এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ,নেপাল, ভূটান ও শ্রীলংকা থেকে কয়েক লাখ পূণ্যার্থী স্নানোৎসবে অংশ নিচ্ছেন বলে লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান। শনিবার রাত ১২ টা ৫১ মিনিটে বিহীত পূজার মাধ্যমে শেষ হবে অষ্টমী স্নানোৎসব।
লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা শিখন সরকার শিপন জানান, ত্রেতা যুগে পিতার আদেশ পালনের জন্য মাকে কুঠার দিয়ে হত্যা করেন পরশুরাম। মাতৃ হত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগে থাকে। কোনোভাবেই কুঠার হাত থেকে ছাড়াতে পারছিলেন না।
তখন অশোক বনে একটি জলাধারে ডুব দিলে তার পাপ মোচন হয়। পরশুরাম সেই জলাধার লাঙ্গল দিয়ে কেটে ব্রহ্মপুত্র নদে এনে মিলিয়ে দেন। সেই থেকে নাম হয় লাঙ্গলবন্দ। সেই থেকে মানুষ পাপ মোচনের আশায় এখানে স্নান করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে লাঙ্গলবন্দে এসেছেন ফনি চন্দ্র দাস। তিনি গন্যমাধ্যমকে জানান, প্রতি বছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে পূণ্য লাভের আশায় তারা লাঙ্গলবন্দ স্নানে আসেন। এখানে স্নান করলে পাপ মোচন হয়।
চট্টগ্রামের মীর সরাই থেকে পরিবারের সঙ্গে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব বাসন্তী রানী সরকার। তিনি জানান, লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্র নদে শুক্লা তিথিতে স্নান করলে ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। তাই তিনি লাঙ্গলবন্দে এসেছেন।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০ টি স্নান ঘাটে সুষ্ঠুভাবে স্নান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নলকুপ ১শ’ ৬০টি অস্থায়ী টয়লেটসহ স্নান ঘাটে কাপড় পরিবর্তন কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। থাকছে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ডুবুরি দল।
বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, পূর্ণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় দেড় হাজার পুলিশ ,৪শ’ ৭১ আনসার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। স্থাপন করা হয়েছে সেনা ক্যাম্প। র্যাব ছাড়াও সাদা পোশাকে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তীর্থস্থানের তিন কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যানজট নিরসনে ট্রাফিক ও নদীতে ৬৪ জন নৌপুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণের জন্য থাকবে ড্রোন ক্যামেরাও।
স্নান উপলক্ষে বন্দর উপজেলা বিএনপিসহ অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান পূণ্যার্থীদের মাঝে খাবার সরবরাহ ও নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সেবায় রয়েছে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক মেডিকেল টিম।
এ দিকে সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মিয়া, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ মজুমদার, বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, ওসি তরিকুল ইসলাম, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ভুইয়া হিরন, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন, স্নান কমিটির উপদেষ্টা শিখন সরকার শিপন, সাধারণ সম্পাদক তাপস কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ল ঙ গলবন দ স ন ন ৎসব ল ইসল ম অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ