রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কায় চামড়া খাতের উদ্যোক্তারা
Published: 5th, April 2025 GMT
তৈরি পোশাকের পর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় চামড়াজাত পণ্য। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের রপ্তানিতে নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর কারণে এ খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, এতে রপ্তানি কমে যাবে। কারণ দেশটির ক্রেতারা কম দামে পণ্য পেতে বিকল্প দেশ খুঁজবেন।
চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য রপ্তানি করে এমন কয়েকজন উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের বার্ষিক বাজার প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৮ থেকে ১০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য রপ্তানি হয়। তবে ইপিবির হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির এই অঙ্ক আরও বড়। এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্যের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম চামড়া ব্যবহার করে অন্যান্য পণ্য যেমন– স্যুটকেস, হ্যান্ডব্যাগ, অ্যাকসেসরিজ ইত্যাদি মিলিয়ে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ২৭ কোটি ডলারের পণ্য।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়েছে। আগের ১৫ শতাংশসহ এই শুল্কহার দাঁড়িয়েছে এখন ৫২ শতাংশের মতো। মার্কিন আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে ১০০ ডলারের একটি পণ্য নিলে নিজ দেশে শুল্ক দিতে হবে ৫২ ডলার। এ পরিস্থিতিতে সে দেশে পণ্যের বিক্রি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
চামড়া খাতের স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা চীনের উদ্যোক্তারাও পড়বেন ক্ষতির মুখে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই চীনের রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন। এতে চীনা ব্যবসায়ীরা নিজ দেশের বাইরে সুবিধাজনক দেশ খোঁজা শুরু করেন। বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে এমন কয়েকজন চীনা উদ্যোক্তা এদেশে কারখানা স্থাপন করেছেন। এখন শুল্ক বাড়ানোর কারণে তারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।
এ পরিস্থিতিতে এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারের উচিত দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া। যেমন– যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস ও কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ বাড়াতে হবে, যাতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় নেয় যুক্তরাষ্ট্র। শুল্ক কমানোর উদ্যোগের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য ব্যবসার খরচ কমানোর পথ খুঁজতে হবে। পণ্য উৎপাদনে বিদ্যমান শুল্ক-কর যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সিনিয়র সহসভাপতি ও লেদারেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল আউয়াল সমকালকে বলেন, তৈরি পোশাকের পর চামড়া খাতের রপ্তানি ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করা চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ শুল্ক কম থাকায় অনেক চীনা ব্যবসায়ী বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করেছেন। চামড়া খাতের রপ্তানিতে পতন ঠেকাতে দুটি পরামর্শ দেন তিনি। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলোতে শুল্ক কমানো দরকার। দ্বিতীয়ত, কূটনৈতিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে জোরালোভাবে আলোচনা করা। এই দুই পদ্ধতিতে এগোলে বাংলাদেশ কিছু না কিছু ফল পেতে পারে।
শাহজালাল লেদার কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজালাল মজুমদার বলেন, নতুন শুল্ক আরোপের ফলে অবশ্যই রপ্তানি কমবে। কারণ কেউ তো লোকসান দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে চাইবে না। শুল্ক কমাতে হলে এখনই সরকারিভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে।
উদ্যোক্তাদের মতে, এমনিতেই ট্যানারির বর্জ্যে দূষণ এবং অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা আছে। চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি কার্যকর না হওয়ায় সাভারে দূষণ কমানো সম্ভব হয়নি। এসব কারণে রপ্তানিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এলডব্লিউজি সনদ অর্জনেও বাধা রয়েছে। ফলে দেশের ব্যবসায়ীরা চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্যের উপযুক্ত রপ্তানি মূল্য পাচ্ছেন না। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল