বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে সরু একখানা নালা। দেখে বুঝতে কষ্ট হয়, বছর পঞ্চাশেক আগেও এই ধানক্ষেতে ছিল খরস্রোতা নদী; চলত পণ্যবাহী নৌকা; হতো মাছ ধরার উৎসব। মাপ বোঝার চেষ্টা করলাম। ফুট দুইয়ের বেশি কিছুতেই হবে না। দুই ফুটের এই নালাই এখন মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়া দিনাজপুরের ইছামতী নদী।
এই যে দুই ফুটের নালা; কোনো কোনো স্থানে তারও অস্তিত্ব নেই। আছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, গাছ, ছোট-বড় পুকুর। ডেলটা প্ল্যান-২১০০ এর আওতায় দিনাজপুরের বেশ কিছু নদী খনন করা হলেও ব্রাত্য থেকে গেছে ইছামতী। পানি উন্নয়ন বোর্ডে স্থানীয়ভাবে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল বটে, তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে খননের অভাবে এ নদী এখন অস্তিত্বহারা।
ইছামতী নামে বাংলাদেশে নদী আছে অন্তত আটটি। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই দশা খুব একটা ভালো নয়। তবে দিনাজপুরের ইছামতী নদীর যা অবস্থা, তাতে এটি বাংলাদেশের বিগত ৪০ বছরের নদী পরিচর্যায় গাফিলতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ, বলতেই হয়। অধিকাংশ স্থানে নিশ্চিহ্ন এ নদী মানচিত্র থেকে উবে গেছে অনেক আগে। এখন এ নামে টিকে রয়েছে স্থানে স্থানে কিছু পুকুরসদৃশ খাল। যেখানেই একটু চওড়া প্রবাহ পেয়েছে, সেখানেই দখল-দূষণে একাকার। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে নদীর ওপরের সেতুগুলো। এই যেমন আমবাড়ী বাজারের কাছে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে এ নদীর ওপর একটি সেতু বানানো হয়েছে নদীর অর্ধেক প্রস্থে। বাকি অংশ মাটি ভরাট করা হয়েছে। একই অবস্থা দেখা যায় আশপাশের অনেক সেতু-কালভার্টে। এতে যেন সরকারই নদী দখলের সুযোগ করে দিয়েছে দখলদারদের।
দিনাজপুরের খানসামার বিলাঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ভারতের আত্রাই নদীতে পড়ে ইছামতী। প্রাচীন এ নদীকে স্থানীয়ভাবে ডাকা হয় ‘সব নদীর মা’। চলতি পথে এ নদীটি ছোট যমুনা ও ভেলামতী নদীর জন্ম দিয়েছে। ইছামতীর তীরে গড়ে উঠেছে রাণীরবন্দর, বিন্যাকুড়ি, আমবাড়ীসহ এ অঞ্চলের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। এ নদীর ওপরই নিকট অতীতে নির্ভরশীল ছিল এসব হাট-বাজারের বাণিজ্য, যাতায়াত ও মৎস্যজীবিকা। নদী মরে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার অববাহিকা। পেশা পাল্টেছেন জেলে-মাঝিরা। সেচের জন্য কৃষকদের গুনতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের বাড়তি খরচ।
আন্তঃসীমান্ত এ নদী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশ অংশের পুরোটাই আমার দেখা। কোথাও কোথাও নদীর পুরো অংশে লাগানো ইউক্যালিপটাস গাছ। বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে– নদী কোথায়; এ তো বাগান! কোথাও নদী ভরাট করা হয়েছে ছাই দিয়ে। যে যেভাবে পেরেছে, দখল-দূষণ করেছে। তালিকাভুক্ত নদী হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এ নদীতে সাইনবোর্ড লাগানো ছাড়া ৪০ বছরে একটা কোদালও ফেলতে পারেনি। সিএস খতিয়ানে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া বেদখল ইছামতী নদী এখন শত শত বিঘার ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি। সে বৈধতা আবার দিয়েছে ভূমি অফিস। তাই খননের প্রস্তাব উঠলেই জমির সে ‘বৈধ’ মালিকরা তেড়ে আসছেন ‘দলিল’ দেখাতে। সব মিলিয়ে ইছামতী নদীকে বাঁচানো এখন এক যুদ্ধের মতো।
নদী নিয়ে এত প্রতিষ্ঠান আর কোনো দেশে আছে কিনা, জানি না। এত এত সরকারি নদী পরিচর্যার প্রতিষ্ঠান থাকলেও একটা তালিকাভুক্ত নদী যখন এভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের দৈনন্দিন তৎপরতা আসলে কী নিয়ে, জানতে ইচ্ছা হয়। দখলদাররা কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? আইনের চেয়েও কি অপরাধীর হাত বড়? অবশ্যই না। সারাদেশে নদী-খাল পুনরুদ্ধারে যে অভিযান চলছে, তা অবৈধ দখলদারদের দীর্ঘদিনের দখলের অবসান ঘটাতে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। কাজেই এ তালিকায় ইছামতীর নামও যুক্ত হবে অতি শিগগির– এ দাবি রাখতেই পারি।
বিগত ২০ বছর ধরে ইছামতী খননের দাবি উঠেছে। কিন্তু তা কানে তোলেনি কোনো সরকার। এখন নদীটির যা অবস্থা, তাতে এটি মৃত্যুর শেষ প্রহর গুনছে। অনতিবিলম্বে ইছামতীকে ফেরানোর কাজ শুরু করা জরুরি হয়ে পড়েছে এবং সেটির জন্য যে কোনো কঠোর পদক্ষেপের দিকেই ধাবিত হতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
ইছামতীর এই করুণ পরিণতির পেছনে আমাদের দীর্ঘদিনের দায় আছে। বাংলাদেশের নদী আন্দোলন বা সরকারি নদী পরিচর্যা প্রক্রিয়া ইছামতীকে রক্ষা করতে পারেনি। শত সহস্র নদীবেষ্টিত এই দেশে ছোট-
বড় প্রতিটি নদীই আমাদের কাছে অমূল্য। কারণ, এ নদীগুলোর ওপরেই টিকে আছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব, আমাদের ভবিষ্যৎ। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো বললে ‘রাশিয়ার ছিল জেনারেল উইন্টার, আমাদের জেনারেল মনসুন।’ সে মনসুনের ধারক তো এ নদীই! নদী বাঁচলেই বাঁচবে বাংলাদেশ। কাজেই, ইছামতীসহ সব বিপন্নপ্রায় নদনদীকে পরিচর্যার আওতায় আনতে হবে। আগামীর জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে হলে এ পদক্ষেপের কোনো
বিকল্প নেই।
শাফায়াত স্বচ্ছ; আহ্বায়ক, রিভারাইন পিপল,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।
সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১ গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২
আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২
ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১
নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২
ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫