বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার আলোচনার মধ্য কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপসহ তিনটি সীমান্তসংলগ্ন ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখেন সীমান্তের বাসিন্দারা।

রোহিঙ্গা বলছে, রাখাইনে পেলে আসা তাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে আরাকান আর্মি। সম্প্রতি সময়ে মিয়ানমারে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত যেতে রাজি হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। যাতে রোহিঙ্গা বোঝে, সেখানকার পরিস্থিতি এখনো ভালো হয়নি।

তবে সীমান্তে মিয়ানমারে অভ্যন্তরে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে উল্লেখ করে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

আশিকুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি অনুপ্রবেশ ঠোকাতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে নাফ নদের ওপারে রাখাইনে মংডুর পেরাংপ্রুতে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এ ছাড়া সোমবারও এসব এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়। মূলত রাখাইনে জামতলি, পেরাংপ্রু ও মাংগালা এলাকায় রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানা গেছে।  

সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সালা উদ্দিন বলেন, ‘সকালে নাফ নদীর ওপারে রাখাইনে আগুনে ধোঁয়া দেখা গেছে। এ সময় স্থানীয় লোকজন দেখতে ভিড় করে জেটিঘাটে। মূলত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরু হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা চোখে পড়ছে। যাতে রোহিঙ্গা ফিরে না যায়, তাই আগুন দিয়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।’

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, ‘ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে ঠিক ওপারে এখন কী হচ্ছে এপার থেকে বলা মুশকিল। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে আবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে কয়েক মাসে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।

সীমান্তে নজর রাখা সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের আলোচনা শুরু হওয়ার থেকে নাফ নদীর ওপারে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এর আগে বেশ কয়েকদিন ধরে এমন ঘটনা দেখা যায়নি। খবর পেয়েছি সেখানে (রাখাইনে) পেলে আসা রোহিঙ্গা পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া তাঁরা জঙ্গলগুলো আগুন দিয়ে পরিষ্কার করছে বলেও জেনেছি।’

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘রাখাইনে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে জেনেছি, এখনও নির্যাতন বন্ধ হয়নি সেখানে (ওপারে)। মূলত আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের মেনে নিতে পারছে না। এছাড়া প্রত্যাবাসনের আলোচনা পর সেখানে (রাখাইনে) রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে বাইরে এনে উত্তাপ রোদে বসিয়ে রাখছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।’

তিনি বলেন, ‘তাছাড়া নতুন করে রাখাইনে জ্বালাপোড়াও করছে আরাকান আর্মি। তারা আমাদের রেখে আসা বাড়িঘর গুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে। যাতে ফিরে গেলেও (বাড়িঘরে) উঠতে না পারি। এটি মূলত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি হওয়ায় বাড়িঘরে আগুন দিয়ে ভয়ভীতি ছড়ানো হচ্ছে।’

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘নতুন করে রাখাইনে আরাকান আর্মির জ্বালাপোড়া হচ্ছে। যার ফলে সীমান্তে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। এতে নতুন করে অনুপ্রবেশের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সীমান্তে আমাদের আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর কাজ করে যাচ্ছে।’

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে নতুন করে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমাদের বিজিবি-কোস্ট গার্ড সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র খ ইন ব ড় ঘর

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ