রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামে রাজনীতিবিদদের প্রশ্রয়ে আবারও অপরাধে ফিরছে সন্ত্রাসীরা। তারা জেলে বসে আঁটছে নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফন্দি। এরই মধ্যে তাদের কেউ কেউ জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করছেন রাজনৈতিক নেতারা। তাদের আশ্রয়ে চলছে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। একই সঙ্গে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি, সরোয়ার হোসেন বাবলা ও নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে শিবির নাছির। তিনজনের মধ্যে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বাবলা ও ছোট সাজ্জাদ গত আট মাসে বন্দরনগরীতে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন। ডাবল মার্ডারসহ পাঁচজনকে খুনে দুই সন্ত্রাসীর সম্পৃক্ততা উঠে আসে। তাদের গ্রুপের সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজিও করে চলেছে। পুলিশের ওসিকে পেটানোর হুমকি দেওয়ার পর ছোট সাজ্জাদের সন্ধান চেয়ে পুলিশ অর্থ পুরস্কারও ঘোষণা করে। পরে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে পুলিশের জালে ধরা পড়েন ছোট সাজ্জাদ। তিন সন্ত্রাসীর মধ্যে ছোট সাজ্জাদ ছয়টি খুনসহ ১৫ মামলা এবং বাবলা পাঁচটি খুনসহ ১৮ মামলার আসামি। অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশর, হাটহাজারীর ট্রিপল মার্ডার, চট্টগ্রাম পলিটেকনিকে জমির উদ্দিনসহ আটটি খুনসহ ৩৬ মামলার আসামি ছিলেন শিবির নাছির। 

কারামুক্তির পর দুই সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও বাবলা চাঁদাবাজি, বালুমহাল ও এলাকা দখল নিয়ে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েন। তবে ৩৬ মামলা কাঁধে নিয়ে ২৬ বছর কারাগারে বন্দি থাকা নাছিরকে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেখা গেছে। গত ৮ আগস্ট তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এখন তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। গত আট মাসে তার বিরুদ্ধে কোনো অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেনি। যদিও তার নাম-পরিচয়ে নানাজনের কাছে টাকা দাবির ফোন গেছে। চাঁদাবাজির এ তথ্য পেয়ে নাছির চকবাজার থানায় ডায়েরি করার পর সংবাদ সম্মেলন করে তার নামে কেউ চাঁদা চাইলে তাদের পুলিশে ধরিয়ে দিতে বলেন। 

এ বিষয়ে নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলাম। মুক্তি পাওয়ার পর ভেবেছি, সুস্থ-সুন্দরভাবে জীবনযাপন করব। সেই মতো ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখছি। এ সুযোগে কিছু দুষ্টচক্র আমার নাম ভাঙিয়ে গার্মেন্ট, বালুমহাল এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি করে ফোন করে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এসব জানতে পেরে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। পুলিশ কমিশনার বরাবরও অভিযোগ দিয়েছি। 

ছোট সাজ্জাদ ও বাবলার হাতে ১১ খুন

২০১৯ সালে অস্ত্র নিয়ে ধরা পড়ে অপরাধ জগতে নাম লেখান সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ। ছয় বছরের ব্যবধানে দুটি ডাবল মার্ডারসহ তিনি ছয়টি খুনের মামলার আসামি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে দুটি অস্ত্র, মারামারি, হত্যাচেষ্টা সাতটি ও চাঁদাবাজির একটি মামলা রয়েছে। আগস্টের পর কারামুক্তি হয়ে চট্টগ্রামে ক্রাইম জোন বায়েজিদ-অক্সিজেন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও বাবলার মধ্যে দফায় দফায় সংঘাত হয়। একে একে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ আব্দুল্লাহ ও মো.

মানিক নামে জোড়া খুনের ঘটনায় ছোট সাজ্জাদ আসামি হন। বর্তমানে তিনি শিবিরের শীর্ষ সন্ত্রাসী দুবাই পলাতক সাজ্জাদের ছত্রছায়ায় একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১৪টি মামলার মধ্যে আটটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে এবং চারটি মামলা তদন্তাধীন। 

সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন বলেন, আমার স্বামী কোনো সন্ত্রাসী কাজ করছেন না। একসময় ঝামেলায় জড়ালেও পরে সে ভালো হয়ে যায়। বাবলা ষড়যন্ত্র করে একের পর এক মামলায় আমার স্বামী ও আমাকে আসামি করে। আমাদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।

অন্যদিকে, পাঁচটি খুনসহ ১৮ মামলার আসামি সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক যুগ তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। জেলে থাকার সময় বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর এখন ওই নেতার ছত্রছায়ায় রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মাঝে একবার জামিন নিয়ে দুবাই পালিয়ে যান। মারামারি করে দুবাইয়ে এক মাস জেল খেটে ২০২০ সালে দেশে ফিরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন। সরকার পতনের পর জামিন পান তিনি। পরে তার ওস্তাদ সাজ্জাদের শক্র হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে বালুমহাল দখল, নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। মূলত চাঁদাবাজি ও এলাকা দখলের দ্বন্দ্ব নিয়েই ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বাবলার বিরোধ। বাবলার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৮টি মামলা বিচারাধীন। তার কাছ থেকে অত্যাধুনিক একে-৪৭, একে-২২সহ আধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। 

সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা বলেন, অনেক বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পাই। মুক্তি পাওয়ার পর ভালো হয়ে জীবনযাপন করছি। কিন্তু ছোট সাজ্জাদ ও তার ছেলেরা আমাকে খুন করার জন্য একের পর এক চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফেসবুকে সাজ্জাদের স্ত্রী হুমকি দেওয়ায় আমাকে মারতে গিয়ে জোড়া খুন করেছে ওরা। আমি কোনো খুনখারাবিতে জড়িত নই। আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কারাগারে পরিচয় হওয়া এক বিএনপি নেতা সহযোগিতা করেছেন।

চকবাজার থানার ওসি জাহিদুল কবির সমকালকে বলেন, নাছির উদ্দিনের সাধারণ ডায়েরির তদন্ত চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নতুন কোনো অভিযোগ নেই।

বাকলিয়া থানার পরিদর্শক মোজাম্মেল হক বলেন, ডাবল মার্ডারের ঘটনার দিনের সংগ্রহ করা সিসি ক্যামেরা ফুটেজে বেলালকে গুলি ছুড়ে মোটরসাইকেলে চলে যেতে দেখা গেছে। এরা ছোট সাজ্জাদের অনুসারী। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র পর এক ক র পর ব বল র অপর ধ ব যবস খ নসহ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে নতুন করে শুরু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সোমবার সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ