ব্যবসায়ীকে মারধর ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার
Published: 10th, April 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এক মাছ ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মারধর করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগে মামুন মোল্লা নামে শ্রমিক দল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে মহিপুর থানা-পুলিশের একটি টিম নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার মামুন উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে, ১৬ মার্চ উপজেলার মহিপুর থানা আওতাধীন আলীপুর বাজার সংলগ্ন থ্রি পয়েন্ট এলাকায় মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো.
অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা মশিউর একজন মৎস্য ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসায়িক কাজে আলীপুর থাকেন। ঘটনার দিন তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে থ্রি পয়েন্ট এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার হাত-পা বেঁধে আলীপুর টোলপ্লাজা সংলগ্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে ৫-৭ জনের একটি টিম তাকে মারধর শুরু করেন এবং তার সঙ্গে থাকা ১ লাখ ৬০ হাজার ও এটিএম কার্ড নিয়ে যায়। কার্ডের মাধ্যমে ২০ হাজার এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজন কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয় তারা। টাকা দেওয়ার আগে তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় হয় এবং বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করা হয়। শুধু তাই নয়, উলঙ্গ অবস্থায় অপরিচিত নারীদের ভিডিও কল করতে বাধ্য করে অভিযুক্তরা।
ভুক্তভোগী মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাকে মারধর ও বিবস্ত্র করে ধারণ করা ভিডিও নিয়ে আমি সব সময় সামাজিকভাবে হেও হওয়ার শঙ্কায় থাকি। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন মুসুল্লি সুলতান বলেন, ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজের দায় দল নেবে না। তার বিরুদ্ধে ওঠ অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দল।’
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব যবস য় ত র কর ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা