অবরুদ্ধ গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে সেখানে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় নিত্যপণ্য একেবারেই অপ্রতুল। সেই সঙ্গে অব্যাহতভাবে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজা সিটির সুজায়ার একটি আবাসিক ভবনে বুধবার রাতে বিমান হামলা চালানো হলে তা পুরোপুরি ধসে পড়ে। এতে অন্তত ৮০ জন ইটপাথরের নিচে চাপা পড়েন। 

গাজা থেকে আলজাজিরার হানি মাহমুদ জানান, উপত্যকাজুড়ে ক্ষুধার দাপট। বাজার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। খাবার সংগ্রহের জন্য মাইলের পর মাইল পথ হাঁটতে হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পর যে ত্রাণ তারা পেয়েছিলেন, সেগুলো ফুরিয়ে গেছে আগেই। লোকজন অভুক্ত দিন কাটাচ্ছেন। 

অবরোধে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি গাজায় জরুরি ওষুধও পৌঁছাচ্ছে না। এতে হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘নজিরবিহীন’ বলে বর্ণনা করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, উপত্যকায় অন্তত ১১ হাজার ফিলিস্তিনি জটিল অসুখে আক্রান্ত। তাদের চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেওয়া প্রয়োজন। মিসরের সঙ্গে থাকা রাফা ক্রসিংও বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। 

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছেন। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে তিনি বলেন, গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে এক ফোঁটাও ত্রাণ পৌঁছায়নি। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, ওষুধ নেই। কোনো বাণিজ্যিক সরবরাহও নেই। ত্রাণ বন্ধ হওয়ায় আতঙ্কের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। গাজা এখন হত্যাক্ষেত্র। বেসামরিক লোকজন সেখানে অন্তহীন মৃত্যুর ঝুঁকিতে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ বলছে, ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজায় মানবিক সহায়তা স্থগিত হয়ে আছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে; ত্রাণকর্মী ও তাদের আবাসনের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিন-বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ সতর্ক করে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও পশ্চিম তীরে দমনপীড়নের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রতিশ্রুতিই মানেনি। 

এ অবস্থায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, আগামী জুনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পারে তার দেশ। ফ্রান্স ফাইভ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফ্রান্সের এ সিদ্ধান্তের হাত ধরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে, যা তারা এখনও দেয়নি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

এশিয়া কাপে আজকের রাত যেন এক নাটকীয় অধ্যায়। ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে আবুধাবির মাঠে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া এই লড়াই কেবল দুই দলের নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ভাগ্যও। কোটি টাইগার সমর্থক তাই আজ তাকিয়ে থাকবে টিভি পর্দায়। কারণ, এই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে, বাংলাদেশ কি সুপার ফোরে উড়াল দেবে, নাকি গ্রুপ পর্বেই শেষ হবে স্বপ্নযাত্রা।

গ্রুপের সমীকরণ এখন টানটান নাটকের মতো। তিন ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কা। সমান ৪ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ঝুলিতে আছে ২ পয়েন্ট; এক জয় ও এক হারের ফল। হংকং অবশ্য তিন ম্যাচেই হেরে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে।

আরো পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

এখন হিসাবটা এমন—
আফগানিস্তান হেরে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই সুপার ফোরে।
আফগানিস্তান জিতলে সমীকরণ জটিল হবে। তখন শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান ৪ হলেও নেট রান রেটে স্পষ্ট এগিয়ে থাকবে আফগানরা (২.১৫০)। শ্রীলঙ্কার রান রেট ১.৫৪৬, আর বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে -০.২৭০-তে।

অর্থাৎ আফগানিস্তান যদি জেতে, তবে বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে এক অসম্ভব সমীকরণের দিকে। সেটা হলো- লঙ্কানদের অন্তত ৭০ রানের ব্যবধানে হারতে হবে এবং তা করতে হবে ৫০ বল হাতে রেখে। অন্যথায় রান রেটের খেলায় পিছিয়েই থাকতে হবে টাইগারদের। তবে বৃষ্টি যদি হানা দেয় কিংবা ম্যাচ কোনো কারণে পরিত্যক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দু’দলই নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে সুপার ফোরে।

ম্যাচকে ঘিরে দুই শিবিরেই চাপ-উত্তেজনার আবহ। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব মনে করেন, চাপটা আসলে শ্রীলঙ্কার ওপরই বেশি, “আমরা এসব টুর্নামেন্ট খেলতে অভ্যস্ত, আমাদের কোনো চাপ নেই। শ্রীলঙ্কা ভালো দল ঠিকই, তবে তারাও চাপে থাকবে। আমার মনে হয় দারুণ একটা ম্যাচ হবে।”

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সমর্থকরা আমাদের জয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরাও জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামব।”

হংকংয়ের বিপক্ষে জিতলেও শ্রীলঙ্কাকে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা বলছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা সহজ হবে না তাদের জন্যও। শেষ পর্যন্ত কারা হাসবে জয়ের হাসিতে, আর কোন সমীকরণে দাঁড়াবে বাংলাদেশের ভাগ্য; এই প্রশ্নের উত্তরই দেবে আজকের আবুধাবির রাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ