গাজায় ঢুকছে না ত্রাণবাহী গাড়ি, অনাহার-মৃত্যু
Published: 11th, April 2025 GMT
অবরুদ্ধ গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে সেখানে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় নিত্যপণ্য একেবারেই অপ্রতুল। সেই সঙ্গে অব্যাহতভাবে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজা সিটির সুজায়ার একটি আবাসিক ভবনে বুধবার রাতে বিমান হামলা চালানো হলে তা পুরোপুরি ধসে পড়ে। এতে অন্তত ৮০ জন ইটপাথরের নিচে চাপা পড়েন।
গাজা থেকে আলজাজিরার হানি মাহমুদ জানান, উপত্যকাজুড়ে ক্ষুধার দাপট। বাজার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। খাবার সংগ্রহের জন্য মাইলের পর মাইল পথ হাঁটতে হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পর যে ত্রাণ তারা পেয়েছিলেন, সেগুলো ফুরিয়ে গেছে আগেই। লোকজন অভুক্ত দিন কাটাচ্ছেন।
অবরোধে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি গাজায় জরুরি ওষুধও পৌঁছাচ্ছে না। এতে হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘নজিরবিহীন’ বলে বর্ণনা করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, উপত্যকায় অন্তত ১১ হাজার ফিলিস্তিনি জটিল অসুখে আক্রান্ত। তাদের চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেওয়া প্রয়োজন। মিসরের সঙ্গে থাকা রাফা ক্রসিংও বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছেন। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে তিনি বলেন, গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে এক ফোঁটাও ত্রাণ পৌঁছায়নি। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, ওষুধ নেই। কোনো বাণিজ্যিক সরবরাহও নেই। ত্রাণ বন্ধ হওয়ায় আতঙ্কের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। গাজা এখন হত্যাক্ষেত্র। বেসামরিক লোকজন সেখানে অন্তহীন মৃত্যুর ঝুঁকিতে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ বলছে, ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজায় মানবিক সহায়তা স্থগিত হয়ে আছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে; ত্রাণকর্মী ও তাদের আবাসনের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিন-বিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ সতর্ক করে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও পশ্চিম তীরে দমনপীড়নের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রতিশ্রুতিই মানেনি।
এ অবস্থায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, আগামী জুনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পারে তার দেশ। ফ্রান্স ফাইভ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফ্রান্সের এ সিদ্ধান্তের হাত ধরে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে, যা তারা এখনও দেয়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা
আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’
স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’
আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।