বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ১৭ পদে চাকরি, আবেদন করুন
Published: 12th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই বাহিনীতে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে মেকানিক্যাল ট্রান্সপোর্ট ড্রাইভার (এমটিডি) পদে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। এ পদে শুধু পুরুষ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
পদের নাম: মেকানিক্যাল ট্রান্সপোর্ট ড্রাইভার (এমটিডি)পদসংখ্যা: ১৭
যোগ্যতা: ন্যূনতম এসএসসি বা সমমান পাস হতে হবে। উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। বিআরটিএ কর্তৃক বৈধ পেশাদার (হালকা/ভারী) ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী হতে হবে। ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ন্যূনতম তিন বছর গাড়ি চালানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কোনো ওয়ার্কশপে টেকনিক্যাল কাজের অভিজ্ঞতা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
আবেদনের বয়স: আবেদনপত্র জমাদানের শেষ তারিখে সর্বনিম্ন ২১ ও সর্বোচ্চ ৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে।
বেতন: সাকল্যে মাসিক বেতন ২২,৫০০ টাকা।
আবেদন যেভাবেআগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত ফরম নিজে হাতে পূরণ করে ডাকযোগে আবেদনপত্র পাঠাতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের চার কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি; সব পরীক্ষা পাসের সার্টিফিকেট, মার্কশিট এবং প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি; অভিজ্ঞতা সনদপত্রের (যদি থাকে) সত্যায়িত অনুলিপি; নাগরিকত্বের সপক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্র/জাতীয়তা সনদপত্রের সত্যায়িত কপি; প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত চারিত্রিক সনদপত্র সংযুক্ত করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের সত্যায়িত অনুলিপি এবং রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রবেশপত্র পাঠানোর জন্য ১০ টাকার ডাকটিকিট–সংবলিত প্রার্থীর ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ ৪ ইঞ্চি বাই ৮ ইঞ্চি সাইজের খাম আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। খামের ওপর প্রার্থীর নিজ জেলার নাম উল্লেখ করতে হবে। নির্ধারিত আবেদন ফরম ও নিয়োগসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এই লিংকে জানা যাবে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালায় থাকছে না নারী ও পোষ্য কোটা১১ এপ্রিল ২০২৫আবেদন ফিআবেদনপত্রের সঙ্গে ‘বিমানবাহিনী কেন্দ্রীয় বেসরকারি তহবিল’ এর অনুকূলে ২০০ টাকা মূল্যের অফেরতযোগ্য ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার করে রসিদ আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। ব্যাংক ড্রাফট /পে-অর্ডার অবশ্যই রাজধানী ঢাকার মহাখালী/ফার্মগেট/কারওয়ান বাজার/ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার অগ্রণী/সোনালী/জনতা ব্যাংকে পরিশোধ যোগ্য হতে হবে।
আবেদনপত্র পাঠানোর ঠিকানা: অধিনায়ক, বিমানবাহিনী রেকর্ড অফিস, টার্মিনাল ভবন, পুরাতন বিমানবন্দর, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫।
আবেদনের শেষ সময়: আগামীকাল রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫।
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বড় নিয়োগ, পদ ১২৩০৯ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪