প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পরই যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যত মিত্রশূন্য করেছেন ট্রাম্প। গত তিন মাসে দশকের পর দশক ধরে চলা ঐতিহাসিক মিত্রদেরও দূরে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। এমনকি তাদের ওপর উচ্চমাত্রায় শুল্ক বসিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছেন। তবে এখন এসে পুরোনো মিত্রদের সহায়তার প্রয়োজন অনুভব করছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে পুরোমাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও কীভাবে জয়ী হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর হুমকির কাছে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নতি স্বীকার না করায় বেইজিংয়ের ওপর শক্তি প্রয়োগে মিত্রদের পাশে চাইছেন তিনি। 

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চমাত্রায় শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে এক সপ্তাহের মাথায় পিছু হটেন। চীন বাদে এবং ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক রেখে অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করেন তিনি। আর কয়েক ধাপে চীনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেন। পাল্টা জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। এ অবস্থায় বেইজিংকে চাপে ফেলতে চাইছে ওয়াশিংটন। 

শনিবার বিবিসি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন স্মার্টফোন ও কম্পিউটারকে অনুরূপ পাল্টা শুল্ক বা রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফের আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও বর্ডার প্যাট্রল নোটিশ জারি করে। সেখানে বলা হয়, অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার সমানুপাতিক পাল্টা শুল্কের বাইরে থাকবে। অ্যাপলের আইফোন, স্যামসাংসহ বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির জন্য এটি বড় সুখবর হতে পারে। অ্যাপল তাদের আইফোনের ৮০ শতাংশ চীনের কারখানায় তৈরি করে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক শক্তি কাজে লাগাতে পারেন, তবে চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরি, শিল্প গুপ্তচরবৃত্তিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে বেইজিংয়ের ওপর চাপ তৈরি করা সম্ভব। তবে একটা সমস্যা হলো, এ পদ্ধতি ট্রাম্পের ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এ সপ্তাহে ফক্স নিউজকে বলেন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো মার্কিন মিত্ররা শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বসবে। এর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনামও। তিনি বলেন, সবাই টেবিলে আসছে এবং মূলত চীন চারদিক থেকে ঘেরা পড়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তু একটি যৌথ লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমরা কীভাবে বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের অংশগ্রহণকে ভারসাম্যে আনতে পারি, এটাই এখানে বড় জয়। 

শুক্রবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিটকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ট্রাম্প যখন বন্ধু ও শত্রু উভয়ের সঙ্গেই সমান আচরণ করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা কেন চীনকে মোকাবিলায় সহায়তা করবে? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আপনাকে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যারা যোগাযোগ করছে। তারা স্পষ্ট করেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন, আমাদের বাজার প্রয়োজন এবং আমাদের ভোক্তা ভিত্তি প্রয়োজন।’ 

তবে ওভাল অফিসে ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প যা কিছু করেছেন, তা মিত্রদের বারবার অস্বস্তিতে ফেলেছে। এ সপ্তাহে বেশ কয়েকবার তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধিতা করেন। আর কেবল তিনিই ইউরোপবিদ্বেষী নন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স মিউনিখ সুরক্ষা ফোরাম ও ইয়েমেনে বিমান হামলা সম্পর্কে কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ চ্যাটে মহাদেশটির প্রতি তাঁর বিতৃষ্ণার কথা জানান। এদিকে, ঐক্যবদ্ধ উত্তর আমেরিকার বাণিজ্য শক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে একটি সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প বারবার কানাডা দখলের হুমকি দিয়েছেন এবং শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মেক্সিকোকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সতর্ক করে দিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাঁর দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। 

এখন প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের এতটাই বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন যে, তারা তাঁর আহ্বান শুনবে না? বারাক ওবামা প্রশাসনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি জেসন ফারম্যান বৃহস্পতিবার সিএনএনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের যে কারও কাছেই অবিশ্বাস্য এক অংশীদার। তবে আমি জানি না আমরা কীভাবে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠব। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ