গাইবান্ধায় জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াতি কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এতে জামায়াতের দুই কর্মী আহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা  গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামের ওয়ার্ড জামায়াতের সেক্রেটারি ও আব্দুল রহমান মণ্ডলের ছেলে শিপন মণ্ডল এবং তার ছোট ভাই জামায়াত কর্মী স্বপন মণ্ডল। তারা গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জামায়াতের কর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াত কর্মীরা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করতে গেলে নান্দিয়া গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.

আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে  জামায়াত কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে দুজন আহত হন। বর্তমানে তারা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

আহত জামায়াত নেতা শিপন মণ্ডল বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলামের নির্দেশে হামলা চালানো হয়। আমার ভাই স্বপন মণ্ডলের কানে ৬টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাকে মারধর করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে  তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বাড়িতেও নেই।

জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি রোকনুজ্জামাম রোকন বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকি। কাউকে জোর করি না। আর আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা গুপ্ত হামলা ও হত্যার পাঁয়তারা করছে।’ 

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ রোববার বিকেলে সাহাপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নান্দিনা গ্রামে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।

গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় রাতেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম আওয় ম ল গ ইসল ম র ত কর ম কর ম র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ