গ্রামের পথে হাঁটছেন শিব-পার্বতী। বাড়ি বাড়ি ঢুকছেন, ঢাকের তালে নৃত্য করছেন। শুধু শিব-পার্বতীই নয়, ভৈরব-চণ্ডি, রাধাকৃষ্ণসহ নানা দেব-দেবতার অবয়বে সেজে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচছেন, গাইছেন ও দক্ষিণা সংগ্রহ করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সন্যাসীর দল। 

এমন দৃশ্যের দেখা মিলল ঢাকার ধামরাই পৌরসভা, গাংগুটিয়া, বারবাড়িয়া, আমতাসহ বিভিন্ন এলাকায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চৈত্রসংক্রান্তি পালনে চৈত্র মাসের শেষ দিনে নানা আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। গ্রামে গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তির দিন নীল পূজা ও চড়ক পূজা পালনের রীতি রয়েছে। মূলত বিদায়ী বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় গ্রামের গৃহস্থের বাড়িতে এ পূজার আয়োজন করা হয়।

এ পূজার অর্থ সংগ্রহে ১০-১২ জনের একেকটি দল গঠন করা হয়। দলের সদস্যরা শিব-পার্বতী, রাধা-কৃষ্ণ, লক্ষ্মী, রাম-লক্ষ্মণ ও মুনি সেজে গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নেচে-গেয়ে দক্ষিণা সংগ্রহ করেন।

দক্ষিণা সংগ্রহের পাশাপাশি ধর্মীয় সংগীত আর নৃত্য পরিবেশন করে গ্রামবাংলার মানুষকে বিনোদন দিয়ে থাকে এই দলের সদস্যরা।

সরকারিভাবে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হলেও পঞ্জিকা অনুযায়ী একদিন আগেই চৈত্র মাস শেষ হয়। আর এদিনে পঞ্জিকা মেনে পালন করা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। এই দিন গ্রামের বাড়ির আঙিনায় মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানসহ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পৌরাণিক ধর্ম মতে, দেবতারা সমুদ্র মন্থন করলে বিষ উঠে আসে। তখন দেবতা শিব দেখলেন এই বিষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র প্রাণিকূল মারা যাবে। তখন তিনি নিজে বিষ পান করে কণ্ঠে ধারণ করেন। বিষক্রিয়ায় তার কণ্ঠ নীল বর্ণ হয়ে যায়। এ কারণে শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। প্রাণিকূলের সুখ-সমৃদ্ধির কামনায় চৈত্র মাসের শেষ দিন শিবের গাজন বা নীল পূজা পালন করা হয়। মূলত চৈত্র সংক্রান্তির দিন বছরের বিদায়বেলায় মানুষ অতীতের দুঃখ, কষ্ট, ব্যর্থতা, রোগ, বিপদ আপদ থেকে মুক্তির কামনা করে।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের পৌরসভা, গাংগুটিয়া, বারবাড়িয়া, আমতাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক দলকে বাদ্যের তালে তালে নেচে–গেয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। দলের বেশির ভাগ সদস্য কিশোর, তরুণ ও যুবক।

তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহস্থের মঙ্গল কামনা করে ধর্মীয় ও বাউল গান এবং নৃত্য পরিবেশন করেন। গান পরিবেশনের পর গৃহস্থরা তাদের চাল, ধান, ডাল, সবজিসহ নগদ অর্থ দেন।

বারবাড়িয়া গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এমনই এক দল। যেখানে শিব-গৌরী সেজেছেন যথাক্রমে ওয়াসিম চক্রবর্তী ও অর্ণব সূত্রধর। তারা বলেন, ‘‘শিব-গৌরি সেজে বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। ভক্তদের কাছ থেকে দক্ষিণা নিচ্ছি। পরবর্তীতে পূজা করা হবে। সেখানে সব ভক্ত যোগ দেবেন।’’

আরেক দলের সঙ্গে থাকা দীপু সূত্রধর ও শিমুল সরকার বলেন, ‘‘এই দল বের করা আমাদের চৈত্র পূজার একটি ঐতিহ্য। প্রতি বছর আমরা এই পূজা করি। বাড়ি বাড়ি ঈশ্বরের ডাক ছড়িয়ে দেই। শিব-পার্বতী, রাধা-কৃষ্ণ সেজে আমরা নাচি ও দক্ষিণা সংগ্রহ করি। রাতে সবাই মিলে পূজা করব।’’

উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া গ্রামের সন্ন্যাসী মরণ বলেন, ‘‘প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবের অর্থ সংগ্রহের জন্য হাটবাজার ও গ্রামে ঘুরে গান নাচ করে টাকা ও উপঢৌকন আদায় করি। উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া টাকা ও খাদ্য দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তির দিন চড়ক পূজা, শিবের গাজন বা নীল পূজা পালন করি।’’

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব রব ড় য়

এছাড়াও পড়ুন:

দুই মিনিটের বিতর্কিত দৃশ্য দিয়ে আলোচনায়, পরে বলিউডকে বিদায় জানান সেই অভিনেত্রী

বলিউডের ইতিহাসে এমন অনেক অভিনেত্রী আছেন, যাঁরা শূন্য থেকে শুরু করে রাতারাতি পরিচিতি পেয়েছেন; পরে আবার হঠাৎই হারিয়ে গেছেন। কিমি কাতকার তেমনই একজন। ১৯৮০-এর দশকে বলিউডে তিনি ছিলেন আলোচিত ও সাহসী অভিনেত্রীদের একজন।

কিমির উত্থান
আশির দশকটি বলিউডে সৃজনশীল ও পরিবর্তনের সময় ছিল, যেখানে অনেক প্রতিভাবান অভিনেতা-অভিনেত্রী তাঁদের ছাপ ফেলেছেন। কিমি ছিলেন সেই সময়ের অন্যতম উদীয়মান নায়িকা। পর্দায় সাহসী দৃশ্যের জন্য তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। যদিও তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত; কিন্তু এর মধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন।

মুম্বাইতে জন্ম নেওয়া কিমি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মডেল হিসেবে, পরে তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৮৫ সালে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব টারজান’ দিয়ে আলোচিত হন তিনি। সিনেমার সাফল্য তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। হেমন্ত বীরজের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি দর্শকদের মন মাতিয়ে দেন। তবে এ ছবিতেই একটি নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করে রাতারাতি আলোচনায় আসেন। দৃশ্যটি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘সেই সময় আমি জানতাম না এই দৃশ্য কতটা বিতর্কিত হবে। কিন্তু অভিনয় আমার জন্য সব সময় ছিল সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জ।’ এরপর ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে অমিতাভ বচ্চন, অনিল কাপুর, গোবিন্দ ও আদিত্য পঞ্চোলির সঙ্গেও সিনেমা করেন তিনি। তাঁর নাচ ও অভিনয়ের দক্ষতা দর্শকদের কাছে তাঁকে প্রিয় করে তোলে।

‘অ্যাডভেঞ্চার অব টারজান’-এ কিমি কাতকার। আইএমডিবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ