চৈত্র সংক্রান্তিতে যেন ধরায় নেমে এসেছে দেব-দেবী!
Published: 13th, April 2025 GMT
গ্রামের পথে হাঁটছেন শিব-পার্বতী। বাড়ি বাড়ি ঢুকছেন, ঢাকের তালে নৃত্য করছেন। শুধু শিব-পার্বতীই নয়, ভৈরব-চণ্ডি, রাধাকৃষ্ণসহ নানা দেব-দেবতার অবয়বে সেজে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচছেন, গাইছেন ও দক্ষিণা সংগ্রহ করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সন্যাসীর দল।
এমন দৃশ্যের দেখা মিলল ঢাকার ধামরাই পৌরসভা, গাংগুটিয়া, বারবাড়িয়া, আমতাসহ বিভিন্ন এলাকায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চৈত্রসংক্রান্তি পালনে চৈত্র মাসের শেষ দিনে নানা আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। গ্রামে গ্রামে চৈত্র সংক্রান্তির দিন নীল পূজা ও চড়ক পূজা পালনের রীতি রয়েছে। মূলত বিদায়ী বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় গ্রামের গৃহস্থের বাড়িতে এ পূজার আয়োজন করা হয়।
এ পূজার অর্থ সংগ্রহে ১০-১২ জনের একেকটি দল গঠন করা হয়। দলের সদস্যরা শিব-পার্বতী, রাধা-কৃষ্ণ, লক্ষ্মী, রাম-লক্ষ্মণ ও মুনি সেজে গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নেচে-গেয়ে দক্ষিণা সংগ্রহ করেন।
দক্ষিণা সংগ্রহের পাশাপাশি ধর্মীয় সংগীত আর নৃত্য পরিবেশন করে গ্রামবাংলার মানুষকে বিনোদন দিয়ে থাকে এই দলের সদস্যরা।
সরকারিভাবে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হলেও পঞ্জিকা অনুযায়ী একদিন আগেই চৈত্র মাস শেষ হয়। আর এদিনে পঞ্জিকা মেনে পালন করা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। এই দিন গ্রামের বাড়ির আঙিনায় মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানসহ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পৌরাণিক ধর্ম মতে, দেবতারা সমুদ্র মন্থন করলে বিষ উঠে আসে। তখন দেবতা শিব দেখলেন এই বিষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র প্রাণিকূল মারা যাবে। তখন তিনি নিজে বিষ পান করে কণ্ঠে ধারণ করেন। বিষক্রিয়ায় তার কণ্ঠ নীল বর্ণ হয়ে যায়। এ কারণে শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। প্রাণিকূলের সুখ-সমৃদ্ধির কামনায় চৈত্র মাসের শেষ দিন শিবের গাজন বা নীল পূজা পালন করা হয়। মূলত চৈত্র সংক্রান্তির দিন বছরের বিদায়বেলায় মানুষ অতীতের দুঃখ, কষ্ট, ব্যর্থতা, রোগ, বিপদ আপদ থেকে মুক্তির কামনা করে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের পৌরসভা, গাংগুটিয়া, বারবাড়িয়া, আমতাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক দলকে বাদ্যের তালে তালে নেচে–গেয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। দলের বেশির ভাগ সদস্য কিশোর, তরুণ ও যুবক।
তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহস্থের মঙ্গল কামনা করে ধর্মীয় ও বাউল গান এবং নৃত্য পরিবেশন করেন। গান পরিবেশনের পর গৃহস্থরা তাদের চাল, ধান, ডাল, সবজিসহ নগদ অর্থ দেন।
বারবাড়িয়া গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এমনই এক দল। যেখানে শিব-গৌরী সেজেছেন যথাক্রমে ওয়াসিম চক্রবর্তী ও অর্ণব সূত্রধর। তারা বলেন, ‘‘শিব-গৌরি সেজে বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। ভক্তদের কাছ থেকে দক্ষিণা নিচ্ছি। পরবর্তীতে পূজা করা হবে। সেখানে সব ভক্ত যোগ দেবেন।’’
আরেক দলের সঙ্গে থাকা দীপু সূত্রধর ও শিমুল সরকার বলেন, ‘‘এই দল বের করা আমাদের চৈত্র পূজার একটি ঐতিহ্য। প্রতি বছর আমরা এই পূজা করি। বাড়ি বাড়ি ঈশ্বরের ডাক ছড়িয়ে দেই। শিব-পার্বতী, রাধা-কৃষ্ণ সেজে আমরা নাচি ও দক্ষিণা সংগ্রহ করি। রাতে সবাই মিলে পূজা করব।’’
উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া গ্রামের সন্ন্যাসী মরণ বলেন, ‘‘প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবের অর্থ সংগ্রহের জন্য হাটবাজার ও গ্রামে ঘুরে গান নাচ করে টাকা ও উপঢৌকন আদায় করি। উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া টাকা ও খাদ্য দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তির দিন চড়ক পূজা, শিবের গাজন বা নীল পূজা পালন করি।’’
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।