কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ
Published: 14th, April 2025 GMT
২৪ এর জুলাই আন্দোলন পেরিয়ে এসেছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বর্ষবরণ উৎসব বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। তাই এ বছরের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
সকালের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশজুড়ে নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করে নিয়েছে বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতার একটি সংখ্যা নয়, এটি বাঙালির বিশেষ দিন।
এদিন ক্যালেন্ডারের পাতার সঙ্গে বদলে যায় হৃদয়ের ছন্দ, মানুষের মনে জমে থাকা প্রত্যাশার রং। পহেলা বৈশাখ বাঙালির একমাত্র উৎসব যেখানে থাকে না কোনো ধর্ম, শ্রেণি, বয়সের ভেদাভেদ।
আরো পড়ুন:
৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন
২৩ দিন পর আবারো প্রাণোচ্ছল কুবি
ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ ১৪৩২-কে ঘিরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের রয়েছে নিজস্ব ভাবনা, প্রত্যাশা ও স্বপ্ন। রাইজিংবিডির কাছে তারা তাদের সেই ভাবনা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নগুলো প্রকাশ করেছেন।
এখন স্বাধীনভাবে নববর্ষ উদযাপন করতে পারছি
ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আমরা এ বছর নববর্ষ উদযাপন করছি। ২৪ এর আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের ধারণ করে র্যালি করেছি। আমাদের ক্যাম্পাসে সর্বশেষ ২০১৯ সালে নববর্ষ উদযাপন করা হয়েছিলো। এখন আমরা স্বাধীনভাবে নববর্ষ উদযাপন করতে পারছি। ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
(লেখক: মোহাম্মদ হান্নান রাহিম, শিক্ষার্থী, ১২তম আবর্তন, গণিত বিভাগ)
সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা
বাংলাদেশে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। প্রতি বছর যেভাবে নববর্ষ উদযাপন করা হতো, এ বছর তা ভিন্ন। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে এ নববর্ষে ভিন্ন আঙ্গিক দেখা যাচ্ছে। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
(লেখক: জুলফা আক্তার, শিক্ষার্থী, ১৪তম আবর্তন, রসায়ন বিভাগ)
মানুষের মাঝে নব জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে
ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্যের চেতনা সৃষ্টি করেছে। মানুষের মাঝে যে নব জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, স্বাধীন ও নিজস্ব ভাবধারা প্রকাশ করার তা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আগামীর বাংলাদেশে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার সম্প্রতির বন্ধনকে অটুট করবে। একইসঙ্গে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জুলাই আন্দোলনে শহীদরা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
(লেখক: বিএম সুমন, শিক্ষার্থী, ১৩তম আবর্তন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।