সম্প্রতি কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এই বেকারত্ব বৃদ্ধির হার মন্দার আশঙ্কার লক্ষণ, যদিও বিষয়টি তেমন একটা নজরে আসে না। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের এক গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের এই গোপন বিষয় উঠে আসছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে দুটি ঝুঁকি জড়িয়ে আছে; একটি হলো মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা, আরেকটি হলো বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা। খবর রয়টার্স।

অতীতে অনেক মন্দার আগে দেখা গেছে, যে মানুষেরা কাজের বাইরে ছিলেন, তাঁদের পক্ষে শ্রমবাজারে ফিরে আসা সময়সাপেক্ষ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ তাঁদের বেকারত্বের মেয়াদ বেড়েছে।

ফেডারেল রিজার্ভ সান ফ্রান্সিসকো গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অতীতে বেশ কয়েকবার মন্দার আগে মানুষের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। এর অর্থ হলো, এসব লক্ষণ মন্দার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়।

তথ্যে দেখা যায়, কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ধীরে ধীরে বেড়েছে; ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ; গত মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। ফেডের অনেক নীতিপ্রণেতা মনে করছেন, বেকারত্বের হার তুলনামূলকভাবে এখনো কম থাকার অর্থ হলো, শ্রমবাজার শক্তিশালী।

গুরুতর বিষয় হলো, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বেকার মানুষের পক্ষে চাকরি পাওয়ার হার কমছে। এই প্রবণতা অতীতে বিভিন্ন মন্দার সময় দেখা গেছে।

একই সময় দেখা গেছে, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে এই বেকারদের বেকারত্বের গড় সময় ৮ সপ্তাহ থেকে বেড়ে ১০ সপ্তাহে উন্নীত হয়েছে। ২০০৭-০৯ সালের আর্থিক সংকটের সময় বেকারত্বের মেয়াদও ছিল এর সমপরিমাণ। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি বেকারত্ব বৃদ্ধির হার অতীতের তুলনায় কম; এই তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে এখনই সচেতন হওয়া দরকার। এই প্রবণতা মন্দার সম্ভাব্য লক্ষণ বলেই তারা মনে করছে।

এদিকে ৫ এপ্রিল মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে জে পি মরগান। পূর্বাভাস দিতে যেমন বেশি সময় লাগেনি তাদের, তেমনি ‍মন্দা আসতেও বেশি সময় না-ও লাগতে পারে বলে তাদের পূর্বাভাস। চলতি বছরেই মার্কিন অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বলে তাদের অনুমান।

মন্দা হলে তার সঙ্গে বেকারত্বও বাড়বে বা উল্টোভাবে বললে, বেকারত্ব বাড়বে বলেই মন্দা আসবে। জে পি মরগান সেটাই বলেছে। কোম্পানির প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টস বা জিডিপি) সংকুচিত হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হলে তার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে। সারা বিশ্বে মন্দার আশঙ্কা ৬০ শতাংশ, জানিয়েছে জে পি মরগান। এর আগে তাদের পূর্বাভাস ছিল, মন্দার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ। অবশ্য ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে জে পি মরগান। অর্থাৎ তখন তারা বলেছে, মন্দার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন কারণে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, অক্টোবরের বৃষ্টিও ভোগাবে
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী