প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অভিন্ন চেয়ারম্যানের অবস্থান ভিন্ন
Published: 15th, April 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের হেমন্তগঞ্জ গ্রামের কৃষক জজ মিয়ার মৃত্যু নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। পুলিশ ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ঈদুল ফিতরের আগের দিন বাজারে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে তাঁর পরিবার ও ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, দুই পক্ষের হাতাহাতি থামাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে মৃত্যু হয়েছে জজ মিয়ার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করছেন। তিনি এ ঘটনার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর দায় চাপিয়ে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা করছেন।
কেওয়ারজোড় ইউপি চেয়ারম্যান হলেন আবুল কাসেম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মিঠামইনে বিএনপির অফিস ভাঙচুর ও লুটপাটসহ মারধরের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। মামলার বাদী উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক লোকমান মিয়া। মামলার পরে আত্মগোপনে থাকার পর গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আদালতে হাজিরা দেন চেয়ারম্যান কাসেম। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে জেলহাজতে পাঠান। ১ মাস জেলে থাকার পর ঈদের ১ সপ্তাহ আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাড়িতে ফিরে এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন চেয়ারম্যান কাসেম। এ নিয়ে ৩০ মার্চ ইউপি চেয়ারম্যান কাসেম ও ইউপি যুবদলের আহ্বায়ক সজিব আহমেদের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। সজিব মিয়া বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জেল থেকে বেরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার জন্য তাদের (যুবদলের নেতাকর্মী) দায়ী করে আসেছন। এজন্য জজ মিয়ার মৃত্যুর দায় তাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
জজ মিয়ার (৬৫) ছেলে মুনাফ মিয়া কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। চেয়ারম্যান কাসেম সম্পর্কে জজ মিয়ার ভাতিজা। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিতে গত সোমবার বিকেলে হেমন্তগঞ্জ গ্রামে যান এ প্রতিবেদক। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দর্জি কারিগর আইনুল হক বলছিলেন, ঈদের আগের দিন আসরের নামাজের পর জজ মিয়া পা পিছলে পড়ে গেলে দু’জন লোক ধরাধরি করে তাঁকে মসজিদে নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁর মাথায় পানি দেওয়া হয়। কোনো ঝগড়াবিবাদ হয়নি।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ মিয়ার ভাষ্য, ইফতারের আগে জজ মিয়া তাঁর সামনেই দাঁড়ানো ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান, তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথায় পানি দেওয়া হয়। নেওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে।
সেদিন কোনো ঝগড়াঝাটি হয়নি জানিয়ে শহীদ মিয়া বলেন, অথচ চেয়ারম্যান (কাসেম মিয়া) বলে বেড়াচ্ছেন জজ মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
একই ভাষ্য আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মদন মিয়ারও। তিনি বলেন, ইফতারের আগে জজ মিয়া মুসল্লিদের সঙ্গেই ছিলেন। হঠাৎ পড়ে যান। তাঁকে কোলে করে মসজিদের দুয়ারে এনে মাথায় পানি দেওয়া হয়। পরে পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে নিয়ে যান।
তবে জজ মিয়ার ছেলে আলি আজগর দাবি করছেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে যান তাঁর বাবা। তখন বুকে আঘাত লেগে তিনি মারা যান। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে তিনি এর বিচার দাবি করেন।
পল্লি চিকিৎসক হাবিবুর রহমান জানান, ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় জজ মিয়াকে তাঁর কাছে আনা হয়। তখন পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন তিনি আর বেঁচে নেই।
হেমন্তগঞ্জ গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের সবার বক্তব্য, সেদিন এলাকায় কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
মিঠামইন থানার ওসি শফিউল আলম জানান, পূর্ব শত্রুতাবশত দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। তবে এতে কেউ আহত হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি মসজিদের সামনে পা পিছলে পড়ে গিয়ে স্ট্রোক করে মারা যান জজ মিয়া। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ