পহেলা বৈশাখের মোটিফ তৈরির শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার  আটজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সন্দেহভাজন হিসেবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার আটজন হলেন- খান মো. রাফি সৃজন ওরফে রাফু (১৮), মো. আল আমিন খান তমাল (২২), মঈন উদ্দিন আহমেদ পিয়াস (২২), মো. বাবুল হোসেন (৬০), মো.

মীর মারুফ (২১), মীর আমিনুর (২৬), মো. মোশারফ হোসেন (৪৮), ও সঞ্জিব ঘোষ (৪০)। তাদের সবার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়।

মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, পহেলা বৈশাখে মোটিফ তৈরির শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এই মামলায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

ওসি এসএম আমান উল্লাহ আরও বলেন, জিঞ্জাসাবাদে এখন পর্যন্ত তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। তবে রিমান্ড শুনানি না হওয়ার কারণে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে মধ্যরাতে মানিকগঞ্জের গড়পাড়া গ্রামে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় মানবেন্দ্র অন্য একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদের চিৎকারে জেগে ওঠেন। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, ধান ভাঙানোর মেশিনসহ শিল্পকর্ম পুড়ে গেছে।

মানবেন্দ্র জানান, দু-তিন দিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে অপপ্রচার চলছিল। এসব কথাবার্তাকে তিনি হুমকি বলে মনে করছিলেন। এ জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় জিডি করেন। মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে আগুন দেয়। তিনি অন্য একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদের চিৎকারে জেগে ওঠেন। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, ধান ভাঙানোর মেশিনসহ শিল্পকর্ম পুড়ে গেছে।

জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, ভোর ৪টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে যান। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, শিল্পী মানবেন্দ্র মামলা করেছেন।

ফেসবুকে অপপ্রচার

ফেসবুকে ‘বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ’, ‘মুজিববাদ’সহ আওয়ামী লীগের নামসংবলিত কয়েকটি পেজে প্রকাশ করা হয়, ‘শেখ হাসিনার বিকৃত মুখাবয়ব তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন মানবেন্দ্র ঘোষ। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায়।’ আইনজীবী নিঝুম মজুমদার তার ফেসবুকে এটি শেয়ার করেন।

পরে মানবেন্দ্র ফেসবুকে লেখেন, ‘এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে বাঘের মোটিফ ছাড়া অন্য কোনো কাজে আমি নিয়োজিত ছিলাম না।’

পরিদর্শন ও তদন্ত

গতকাল বুধবার দুপুরে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পরিদর্শন করেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সদস্যরা, জেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

জেলা প্রশাসক মানোয়ার বলেন, ‘এ ঘটনায় ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আবেদীন কায়সার সমকালকে বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাড়ির পাশে এই চিত্রশিল্পীর বাড়ি।’

বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেবে সরকার

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করে দেবে সরকার। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। পরে রাত পৌনে ৮টায় জানানো হয়, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিন্দা-সমাবেশ

ভাস্কর মানবেন্দ্রর বাড়িতে আগুন দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

গতকাল বিকেলে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সমাবেশে সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল কাদের দুটি দাবি জানান। তিনি  বলেন, শিল্পী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। জড়িতদের বিচার করতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ন কগঞ জ র সদস য ফ সব ক ব এনপ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ