বাংলা ভাষা নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মেধাভিত্তিক টিভি রিয়ালিটি শো ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ’–এর ষষ্ঠ বর্ষের বিজয়ী হলেন চট্টগ্রামের অভিষেক দাশ।

আজ রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জমকালো আয়োজনে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। ইস্পাহানি মির্জাপুরের উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় শোটি আয়োজন করা হয়।

মহোৎসব ও চূড়ান্ত পর্বে সেরা বাংলাবিদ হিসেবে ১০ লাখ টাকার মেধাবৃত্তি জিতে নিয়েছেন অভিষেক দাশ। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন ঢাকার রিফা তাসনিয়া। তিনি পেয়েছেন তিন লাখ টাকা এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী চট্টগ্রামের রশ্মি তুলতুল চৌধুরী পেয়েছেন দুই লাখ টাকার মেধাবৃত্তি।

এ ছাড়া প্রথম ১০ জন প্রতিযোগীর প্রত্যেকে পেয়েছেন একটি করে ল্যাপটপসহ ব্যক্তিগত লাইব্রেরি করার জন্য ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের বাংলা বই ও বইয়ের আলমারি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইস্পাহানি টি লিমিটেড জানিয়েছে, নতুন প্রজন্মের কাছে শুদ্ধ বাংলা, বানান ও ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে ইস্পাহানি মির্জাপুর প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় শুদ্ধ বাংলা ভাষার ব্যবহার, বানানচর্চা, শুদ্ধ উচ্চারণ ও ব্যাকরণের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন পর্যায় শেষে চূড়ান্ত প্রতিযোগীদের নির্ধারণ করা হয়।

প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও ভাষাবিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। প্রধান বিচারক হিসেবে বাংলাবিদে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও ভাষাবিদ তারিক মনজুর, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ত্রপা মজুমদার। অতিথি বিচারক হিসেবে বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক মহোৎসবে উপস্থিত ছিলেন।

মহোৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি লিমিটেডের ডিরেক্টর জাহিদা ইস্পাহানি, ইমাদ ইস্পাহানি ও মির্জা আহমেদ ইস্পাহানি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান এবং চ্যানেল আই ও ইস্পাহানির অন্য কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুনইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ ষষ্ঠ বর্ষের মহোৎসব শুক্রবার১৭ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত ছ ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ