চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী শিশুসহ তিনজনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা গতকাল শুক্রবার রাত আটটায় খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা ও দাদি খাল থেকে উঠে এলেও এখনো শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়নি। পার হয়েছে ১৪ ঘণ্টা।

শিশুটিকে উদ্ধারে গতকাল সিটি করপোরেশন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন। রাত তিনটা পর্যন্ত খালের বিভিন্ন অংশে নেমে ডুবুরিরা তল্লাশি করেন। এরপর আজ সকাল সাতটায় নৌবাহিনী পুনরায় অভিযান শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে সকাল ১০টায় প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, ১৪ ঘণ্টা পার হলেও শিশুটির খোঁজ মেলেনি। তল্লাশি চালাচ্ছে নৌবাহিনী।

এদিকে শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারলে নগদ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটিকে উদ্ধারে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। যেকোনো ব্যক্তি শিশুটিকে উদ্ধার করতে পারলে নগদ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাবেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, শিশুটির নাম সেহরিশ। তার মায়ের নাম সালমা বেগম। বাবা নাম মো.

শহিদ। তাঁরা নগরের আছদগঞ্জ এলাকায় থাকেন। চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় মো. শহিদের বোনের বাসা। সেখানেই বেড়াতে এসেছিলেন সালমা বেগম, শিশু সেহরিশ ও তার দাদি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে উঠেছিলেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়। সেটিই উল্টে পড়ে খালে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক বলেন, খালটি হিজড়া খাল নামে পরিচিত। খালের বিভিন্ন অংশে আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। চালক অটোরিকশাটি ঘোরাতে গিয়ে খালে ফেলে দেন। তাৎক্ষণিকভাবে দুই নারী উঠে এলেও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। নগরে গতকাল সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে খালে পানির স্রোত ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, খালটির সঙ্গে সড়ক একেবারে লাগোয়া। এ সড়কে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলায় খালের পাশে থাকা একটি নিরাপত্তাবেষ্টনী খুলে রাখা হয়েছিল। এ কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল। নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না। অবশ্য গতকাল রাতে মেয়র শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালের পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী বসানো হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ