বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, সংস্কার হলো নির্বাচন পেছানোর বাহানা। দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সরকার যে সংস্কার করতে চাইছে, তা কোনো দিনই কার্যকর হবে না।

আজ শনিবার দলের বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জি এম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

জি এম কাদের সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারকেই বৈধ সরকার বলা হয়। এই সরকার নির্বাচিত নয়। কিন্তু হাইকোর্ট এই সরকারকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা মেনে নিয়েছি। এ সরকার মাঝামাঝি হয়ে গেছে। এই সরকার যে সংস্কারই করুক, তা নির্বাচিত সংসদে পাস করতে হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই।’

আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অপরাধের বিচারের আগে নির্বাচন নয়—বিভিন্ন দলের এমন বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে জি এম কাদের বলেন, ‘বিচারব্যবস্থায় কেউ বাধা দিচ্ছে না। বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন পেছানো হচ্ছে। বর্তমান সরকার বুঝতে পারছে না, নির্বাচন দীর্ঘায়িত করে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। এই সরকার দেশ চালাতে পারবে না। নির্বাচন পেছানোর কারণে তারা কত বড় গর্তে পড়বে, তা তারা বুঝতে পারছে না।’

একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে সব সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ—মন্তব্য করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো ঠিক করতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসন যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার যেন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে, সে নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

বিগত সময়ে জাতীয় পার্টির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি এবং জাতীয় পার্টির ৭০ ভাগ নেতা-কর্মী নির্বাচনে অংশ নিইনি। আমাকে নির্বাচিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, আমি রাজি হইনি। কিন্তু ২০১৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রায় সব দলই অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশের সব দলই অংশ নিয়েছিল। আমরাও সবার সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিশেষ কারণে আমাদের নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণ ‘বেআইনি কাজ নয়’ বলে মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমার দল যদি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়, আমি নির্বাচন করতে পারি। আমি তো কোনো আইন ভঙ্গ করিনি। নির্বাচনের আগে ও পরে তৎকালীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছি। আমার চেয়ে কঠোর সমালোচনা কেউ করেনি। নির্বাচন সঠিক হয়নি—এর বিশদ বর্ণনা দিয়ে বক্তৃতা করেছি, কলাম লিখেছি। সব রেকর্ড আছে।’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার পরিচালনায় বর্ধিত সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো.

মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই সরক র এম ক দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষ চিন্তা করতে পারেনি, তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমাদের সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছে। এক বছর আগেও মানুষ চিন্তা করতে পারেনি যে তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু আজ সারা দেশের জনগণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং ইচ্ছেমতো কেড়েও নেন। তা আমরা জুলাই বিপ্লবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি।’

আজ সোমবার সন্ধ্যায় খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘সহযোগী সদস্য সংগ্রহ অভিযান-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথাগুলো বলেন।

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘২০১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। আর এসব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের সব অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যারা হাত-পা হারিয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে, তারা কখনোই এসব খুনিকে ক্ষমা করবে না। খুনিদের বিচার করতে হবে এবং সব স্তরে সংস্কার করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব থাকবে না। নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণই তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যাঁরা নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার করতে চাইবেন, জনগণ তাঁদের প্রতিহত করবেন।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দম্ভে মানুষের ওপর লাগামহীন জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জেল-জুলম, গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করেছিল যে তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসন কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ জালিমদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না।’

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, বেকারত্ব ও চাঁদাবাজি থাকবে না। যেখানে মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। আমরা সাম্যের ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’

খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও বায়তুল মাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম। গণসংযোগের সময় স্থানীয় মার্কেটের ব্যবসায়ী, পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২ মে ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ, প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ৭ অপরাধ
  • মানুষ চিন্তা করতে পারেনি, তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল