বাণিজ্যযুদ্ধ ট্রাম্প-সিয়ের, কেন বিপাকে আইফোন
Published: 21st, April 2025 GMT
প্রতিটি আইফোনের ওপর একটি লেবেলে লেখা থাকে—যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যালিফোর্নিয়ায় নকশা করা।’ কিন্তু সেগুলো কোথায় তৈরি? এই আইফোনগুলো তৈরি হয়ে আসে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ চীন থেকে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ২২ কোটি আইফোন বিক্রি করে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। সেগুলোর ১০টির মধ্যে ৯টিই চীনে তৈরি।
জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই চীনের ওপর চড়াও হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি মাসে দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। যদিও মুঠোফোন, কম্পিউটার ও কিছু প্রযুক্তি পণ্যকে এই শুল্কের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। তবে তা বেশি দিনের জন্য শুল্কমুক্ত থাকবে না।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি অর্থনীতির দেশ। তাদের একে অপরের ওপর নির্ভরশীলতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে ট্রাম্পের হতবাক করে দেওয়া শুল্ক আরোপের পর রাতারাতি সেই সম্পর্কের ওপর বড় আঘাত এসেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে অ্যাপলও।
অর্থনীতিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম নিক্কি এশিয়ার হিসাবে, ২০২৪ সালের আইফোনের শীর্ষ ১৮৭টি সরবরাহকারীর ১৪০টিরই চীনে কারখানা ছিল।চীনে যেভাবে শুরু অ্যাপলের যাত্রাকম্পিউটার বিক্রির জন্য গত শতকের নব্বইয়ের দশকে চীনের বাজারে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রবেশ করে অ্যাপল। ১৯৯৭ সালের দিকে প্রতিষ্ঠানটি যখন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মুখে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল, তখন চীনের বাজারে নতুন জীবন ফিরে পায় তারা।
২০০১ সালে সাংহাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে ব্যবসা শুরু করে অ্যাপল। তখন তারা দেশটিতে নানা পণ্য উৎপাদন শুরু করে। পরে আইপড ও আইফোন তৈরির জন্য চীনে তাইওয়ানভিত্তিক ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ফক্সকনের সঙ্গে অংশীদারত্বে যায় অ্যাপল।
২০০৮ সালে বেইজিংয়ে প্রথম নিজেদের পণ্যের দোকান খোলে অ্যাপল। শহরটিতে সে বছর অলিম্পিকের আয়োজন করা হয়েছিল। পশ্চিমের সঙ্গে তখন চীনের সম্পর্কও সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। এরপর শিগগিরই চীনে ৫০টি দোকান খুলে ফেলে অ্যাপল। দেশটিতে প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে যায় যে দোকানগুলোর বাইরে ক্রেতাদের লাইন লেগে থাকত।
বেইজিংয়ে একটি অ্যাপলের স্টোর.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।