সংবিধান পরিবর্তনে গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে: সামান্তা শারমিন
Published: 21st, April 2025 GMT
সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে যেতে হবে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পাটির্র (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, ‘এনসিপির পক্ষ থেকে গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা এবং নানা ধরনের অসহযোগিতা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পুরোনো সংবিধান কোনোভাবেই জনবান্ধব নয়, নারীর জন্য তো নয়ই।’ সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই স্মৃতি হলে এনসিপি নারী সেল চট্টগ্রামের উদ্যোগে ‘রাজনীতি ও নাগরিক হিসেবে নারী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় সামান্তা বলেন, ‘সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে আমরা নারীদের সর্বোচ্চ ভূমিকা দেখতে চাই। দল-মত ও পক্ষ নির্বিশেষে সবাই যেন নারী নেতৃত্ব তুলে আনতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকেও সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির ৩১ দফার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘৩১ দফায় সবই বলা হয়েছে। তারা ডে কেয়ারের কথা বলছেন। অনেক ধরনের নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছেন। কিন্তু সুকৌশলে একটি বিষয় এড়িয়ে তারা গেছেন। তা হচ্ছে, নারীদের দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধির কথা। জাতীয় সংসদের যে আসনগুলো সংরক্ষিত আছে, সেখানে যেন প্রত্যক্ষ ভোট হয়।’ সভায় তিনি নারীদের ১০০ আসনে প্রতিযোগিতামূলক নেতৃত্ব তুলে আনার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সংবিধান নিয়ে আমাদের আলাপ করতে হবে। যারা বলবে তুমি কি বোঝো সংবিধানের, তাকে বলবেন- গেট লস্ট। কারণ সংবিধানটা হচ্ছে- জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের দলিল। আমাদের বলা হয়েছে, আমরা নাকি গণপরিষদ নির্বাচন বুঝি না। সংবিধান যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে গণপরিষদ লাগবে– এটা সবাই বোঝে, শুধু আপনারা বোঝেন না। সংবিধান সংশোধন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে। যারা গণভোটের বিরোধিতা করছে তাদের আপনারা প্রত্যাখ্যান করুন।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাসনুভা জাবীন, সংগঠক রাসেল আহমেদ প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত নিতে হতো: নাহিদ ইসলাম
মানবিক করিডরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ বুধবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির নাহিদ এ কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই দলের বৈঠক হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক বলেন, এই সরকার একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে এবং পরিচালিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি একটা সমর্থন আছে। ফলে জাতীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এই করিডর বা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে থাকবে, তা তারা (এনসিপি) এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মানবিক করিডরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য–বিবৃতি দিচ্ছে, তার সঙ্গে তারা একমত।
জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সে উদ্দেশ্যই মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসা। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন নিম্ন ও উচ্চ উভয় কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এনসিপি উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলেছে। ইসলামী আন্দোলন নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করব। সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, আমরা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি। উনারা বলেছেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।’
বৈঠকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার চলার সময় তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন স্থগিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ে দুই দল একমত।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনগণের অধিকার হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের জন্য, রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্যই জুলাই অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল। যদি পুরোনো বন্দোবস্তের জন্য কেউ চেষ্টা করে, জনগণ তা মেনে নেবে না।
সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে তিনটি বিষয়ে ঐকমত্য হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির।
বিষয়গুলো হলো দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন; গণহত্যা ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার করা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখা এবং সর্বশেষ মৌলিক সংস্কার শেষ করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
মতবিনিময় সভায় এনসিপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক সাদ্দাম হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আল আমীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম প্রমুখ।