গ্রাম ছাড়তে চাননি, সে ‘অপরাধেই’ বৃদ্ধা নাজওয়াকে গুলি করে মারেন ইসরায়েলি সেনারা
Published: 22nd, April 2025 GMT
নূর ঘাচাম বাড়ির ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে মায়ের ছোট কালো জুতাজোড়া বের করলেন। জুতাজোড়া আলতো করে ধরে তাতে চুমু খেলেন।
নূর ঘাচামের (৪৮) মায়ের নাম নাজওয়া ঘাচাম। খুবই স্বাধীনচেতা একজন মানুষ ছিলেন তিনি। চারদিকে ইসরায়েলির বোমাবর্ষণ ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে তাদের লড়াই চলার মধ্যেও এক বছর তিন মাস নাজওয়া দেশটির দক্ষিণের গ্রাম ইয়ারুনে নিজের বাড়ি ছেড়ে যাননি।
‘মা তাঁর বাড়িটা খুব পছন্দ করতেন। এটা পরিষ্কার যে তিনি নিজের বাড়িকে খুব গুরুত্ব দিতেন,’ মিডল ইস্ট আইকে বলছিলেন নূর ঘাচাম।
একসময় বাড়িটা কেমন ছিল, তা দেখাতে নূর তাঁর মুঠোফোন বের করেন। সাদা পাথরে তৈরি দোতলা বাড়ি। টেরাকোটা ছাদের টালি, আকাশি রঙের শাটার। বাড়ির সম্মুখে উঠানের গেটের ওপর ছড়িয়ে আছে বেগুনি ফুলের ঝাড়। বাড়ির প্রবেশপথে একটি পাইনগাছ, শাখাগুলো ছাদের ওপর প্রসারিত।
যাহোক, গত বছরের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তবে তখনো ইসরায়েলি সেনারা ইয়ারুন ছেড়ে যাননি। সালমান বলেন, নাজওয়ার ওপর ইসরায়েলি সেনারা একদিন গুলি চালান। তিনি ও তাঁর দল বারবারই নাজওয়ার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ৩০ দিন ওই এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখে তাঁদের ঢুকতে দেননি ইসরায়েলি সেনারা।নাজওয়ার বাড়ির সামনের বাড়িতেই থাকেন শহরের মেয়র ও তাঁর স্ত্রী লায়লা তাহফা (৫৩)। তাহফা বলেন, তাঁর মনে আছে, নাজওয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজ বাড়ির সিঁড়িগুলো ও আশপাশের স্থান পরিস্কার কিংবা বাগান পরিচর্যার কাজ করতেন।
তাহফা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘নাজওয়ার কাছে তাঁর বাড়িটা ছিল একটা রাজ্যের মতো, বাইরের কিছুই যেন এর কাছে কিছু নয়।’
নাজওয়ার সঙ্গে নিজের কিছু সুখস্মৃতির কথা স্মরণ করেন তাহফা। তাঁকে অনেক বছর ধরে চিনতেন তিনি। বলেন, ‘৭০–এর কাছাকাছি বয়সে এসেও তিনি (নাজওয়া) ছিলেন প্রাণবন্ত, সব সময় গল্প করতে পছন্দ করতেন।’
তাহফা বলছিলেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ বাধলে তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তিনি সব সময় বলতেন, “আমি বোমার ভয় পাই না, শুধু আমার বাড়িতে থাকতে চাই।”’
আমি তাঁর (নাজওয়া) মরদেহ দেখেছি, তিনি বৃদ্ধ নারী ছিলেন। তাঁকে গুলি করার কোনো দরকার ছিল না।মোহাম্মদ সালমান, লেবাননের চিকিৎসকএকদিন ২৮ বছর বয়সী চিকিৎসক মোহাম্মদ সালমান ও তাঁর উদ্ধারকর্মী দল নাজওয়াকে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার বিষয়ে রাজি করাতে সক্ষম হয়। কিন্তু অল্প দিন পরই আবার বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
মোহাম্মদ সালমান মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘স্রষ্টার নামে শপথ করে বলছি, নাজওয়া হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন।’
‘তাঁকে গুলি করার কোনো প্রয়োজনই ছিল না’
যুদ্ধের মধ্যে নাজওয়াকে যাঁরা মাঝেমধ্যে দেখতে যেতেন, তাঁদের একজন সালমান। তাঁরা তাঁকে খাবার, পানি ও অন্যান্য অপরিহার্য সামগ্রী দিয়ে আসতেন।
যাহোক, গত বছরের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তবে তখনো ইসরায়েলি সেনারা ইয়ারুন ছেড়ে যাননি। সালমান বলেন, নাজওয়ার ওপর ইসরায়েলি সেনারা একদিন গুলি চালানেন। তিনি ও তাঁর দল বারবারই নাজওয়ার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ৩০ দিন ওই এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখে তাঁদের ঢুকতে দেননি ইসরায়েলি সেনারা।
সালমান বলেন, অবশেষে এক মাস পর ২৭ ডিসেম্বর তাঁরা নাজওয়ার বাড়িতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। দেখেন, নাজওয়া মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তিনি বলেন, তাঁকে তিনবার গুলি করা হয়েছে। তাঁর শরীরের আঘাতের চিহ্নও ছিল। এতে মনে হয়, তাঁকে মারধর বা পদদলিত করা হয়েছে।
চিকিৎসক সালমান বলেন, অবশেষে এক মাস পর ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর তাঁরা নাজওয়ার বাড়িতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। দেখেন, নাজওয়া মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁকে তিনবার গুলি করা হয়েছে। শরীরের আঘাতের চিহ্নও ছিল। এতে মনে হয়, তাঁকে মারধর বা পদদলিত করা হয়েছে।‘আমি তাঁর (নাজওয়া) মরদেহ দেখেছি, তিনি বৃদ্ধ নারী ছিলেন। তাঁকে গুলি করার কোনো দরকার ছিল না,’ বলছিলেন সালমান।
নাজওয়ার মরদেহ উদ্ধার করে তা গ্রামের কাছাকাছি তেবনাইন গভর্নমেন্ট হাসপাতালে পৌঁছে দেন চিকিৎসক সালমান।
হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের দেওয়া একটি প্রতিবেদন মিডল ইস্ট আইয়ের হাতে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাদের আগ্রাসনে নিহত নাজওয়ার মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে লেবাননের রেডক্রস। মাথা, তলপেট ও বুকে আঘাতের কারণে তিনি মারা গেছেন। তাঁর বাঁ ঊরু ভাঙা ছিল।’
নাজওয়ার ঘটনা নিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চায় মিডল ইস্ট আই। তবে তারা তাতে সাড়া দেয়নি।
‘তিনি জন্মস্থানকে ভালোবাসতেন’
নাজওয়ার ছেলে নূরের কিশোরকাল কেটেছে ইয়ারুন গ্রামে। ইসরায়েলের বোমা হামলায় বিধ্বস্ত নিজেদের বাড়িতে এসে ধ্বংসস্তূপ এক পাশে সরিয়ে রাখছিলেন তিনি। এক জায়গায় একটা চুলার ঝাঁঝরি পান। নূর বলেন, এটি ছিল রান্নাঘরের স্থান। এখানে মায়ের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাটাতেন তিনি।
নূর বলেন, রান্না শেষে মা ওই জায়গা পরিষ্কার করতেন। পরে দীর্ঘ সময় বসে তাঁরা গল্প করতেন।
বাবা ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে ১৯৯১ সালে ইয়ারুন ছেড়ে ভেনেজুয়েলা চলে যান নূর। ওই সময় ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের গ্রাম দখল করে নেয়। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। কিন্তু বাড়ির বারান্দা থেকে ইসরায়েলের মারাকাভা ট্যাংকের আনাগোনার দৃশ্য এখনো মনে করতে পারেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। ২৮ নভেম্বর, ২০২৪। মারজাইউন এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ন জওয় র ল ব নন মরদ হ র ওপর করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত