ভবদহ পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা, নদী খনন করবে সেনাবাহিনী
Published: 22nd, April 2025 GMT
যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরিদর্শন করলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ভবদহ স্লুইসগেট ২১ ভেন্ট এলাকা পরিদর্শন করেন তিন উপদেষ্টা।
তিন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও সেনাবাহিনীর যশোর এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফিংয়ের সময় পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গতবারের মত এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এ এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু হয়েছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপার মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে এদিন সকাল ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন তিন উপদেষ্টা। পরে ধান খেত পরিদর্শন করেন তিন উপদেষ্টা।
এর আগে থেকে ভবদহ পাড়ের মানুষেরা বিভিন্ন ভবদহ স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দাবি দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন। এসময় তারা দ্রুত টিআরএম চালুসহ স্থানীয় নদীগুলো খনন করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় খেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা সিংহভাগ লুটপাটে জড়িত ছিলেন। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র ফ র ক ই আজম ত ন উপদ ষ ট সমস য র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এ যেন এক অন্তহীন দুর্ভোগ
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার বিষয়টি অনেক বছর ধরে প্রথম আলোর নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসছে। এ নিয়ে অনেকবার সম্পাদকীয়ও করা হয়েছে। রাষ্ট্র ও সরকারের নীতিনির্ধারণে পরিকল্পনাহীনতা ও সমন্বহীনতার অন্যতম দৃষ্টান্ত হতে পারে ভবদহের সংকট। টানা বৃষ্টির ফলে ভবদহের ৩০টি গ্রাম আবারও তলিয়ে গিয়ে চরম জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। দুর্ভোগ থেকে এ অঞ্চলের মানুষের কি মুক্তি মিলবে না কোনো দিন?
প্রতিবছর বর্ষা এলেই ভবদহ অঞ্চলের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। আর এবার তো জুলাই মাসের ২৭ তারিখেই বৃষ্টির পরিমাণ ৫১৪ মিলিমিটারে পৌঁছেছে, যা গত জুনের গড় বৃষ্টিকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফলস্বরূপ, ৫২টি বিল প্লাবিত হয়ে সেই পানি উপচে পড়ছে আশপাশের গ্রামে। বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি ধর্মীয় স্থাপনাও রক্ষা পাচ্ছে না।
এ দুর্ভোগের মূল কারণ কী? ভবদহ অঞ্চলের পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা মূলত মুক্তেশ্বরী, টেকা, হরি ও শ্রী নদীর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বছরের পর বছর ধরে পলি জমে এ নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে পানি ধারণ ও নিষ্কাশনক্ষমতা কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালির অভিযোগ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের মাত্র ছয়টি গেট খোলা রাখা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু না করলে এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।
তবে আশার আলো বলতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছে। আগামী আগস্ট মাস থেকে প্রায় ৮১ কিলোমিটার নদী খননের কাজ শুরু করবে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানিয়েছেন, জোয়ারের সময় স্লুইসগেটের বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করা হচ্ছে এবং ভাটার সময় গেটগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে।
নদী খনন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আমডাঙ্গা খালের সংস্কারকাজও দ্রুত শুরু হওয়া জরুরি। কিন্তু এ মুহূর্তে যে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন, তাঁদের তাৎক্ষণিক স্বস্তির জন্য কী করা হচ্ছে? ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের সব গেট খুলে দেওয়ার দাবি কেন পূরণ হচ্ছে না? টিআরএম চালুর বিষয়টি কেন এখনো উপেক্ষিত?
ভবদহের এ সংকটের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সবাই ভালোভাবেই অবগত। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবাই সে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ অঞ্চল নিয়ে নানা সময়ে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই এ অঞ্চলের সংকট নিরসন হয় না। ভবদহের কান্না কবে ফুরাবে, এটিই শুধু আমাদের প্রশ্ন।