পরীমণির বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের মামলা
Published: 22nd, April 2025 GMT
মাদক সেবন করে গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগে আলোচিত চিত্রনায়িকা শামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে পরীমনির সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে বসবাসরত সৌরভ (২৮) নামে এক ব্যক্তিকে।
মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী গৃহপরিচারিকা পিংকি আক্তার।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ৮ মের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসিদুস জামান নিশান। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৫০৬/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা গেছে, মামলার বাদী ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার (২৪) নেত্রকোণা জেলা সদরের মৌগাতী ইউনিয়নের ফাদুলিয়া গ্রামের মোজাম্মেলের মেয়ে।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের মার্চে মামলার বাদী পিংকি আসামিদের বাসায় কাদের এজেন্সি নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহপরিচারিকার কাজের জন্য চাকরি নেন। একটি বাচ্চাকে দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে এজেন্সি হতে বাদীকে আসামিদের বাসায় নিয়োগ দেওয়া হলেও বাদীকে দুটি বাচ্চার দায়িত্ব পালন করতে হতো। এছাড়াও বাদীকে দিনে ও রাতে উভয় সময় বাসার রান্নার কাজ করতে হতো। তবুও বাদীর চাকরি একান্ত আবশ্যক হওয়ায় বাদী তার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ২ এপ্রিল দুপুর ১টায় আসামি পরীমণি তার মেকআপ রুম হতে মাদক গ্রহণ করে বাচ্চার রুমে এসে বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। বাদী গালিগালাজ কেন করছেন জানতে চাইলে পরীমণি বলেন, তুই আমার বাচ্চার জন্য দুধ কেন তৈরি করছিস, এখন ওকে সলিড খাবার দিবি। বাদী বলেন, বাচ্চার খাওয়ার রুটিন অনুসারে এখন দুধ খাওয়ানোর কথা, তাই আমি দুধ তৈরি করেছি।
বাদীর অভিযোগ, এসময় পরীমণি ক্ষিপ্ত হয়ে তার মাথায়, মুখে ও চোখে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মেরে আহত করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী পিংকি পরীমণির মারধরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর বাদী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। ভুক্তভোগী পিংকি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরীমণিকে অনুরোধ করতে থাকেন। ঘটনার সময় ২ নম্বর আসামি সৌরভ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আসামিরা বাদীর কোনও কথা শোনেননি। আসামি সৌরভ পিংকিকে নির্যাতন করার জন্য পরীমণিকে উৎসাহিত করতে থাকেন এবং বাদীকে বাসার বাইরে যাওয়া থেকে বিরত করেন।
ভুক্তভোগী পিংকি আরও বলেন, ৯৯৯ এ কল করে পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে যাই। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি আমি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ হপর চ র ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম অধিকার ও সুস্থ কর্মপরিবেশ
আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মেহনতি মানুষদের স্মরণ করিবার দিন। তৎসহিত সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিতকরণের সংগ্রামে নূতন শপথ গ্রহণের দিন।
মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যদ্রূপ বৃদ্ধি করিয়াছে, তদ্রূপ তাহাদিগকে অধিকার সচেতনও করিয়াছে; প্রেরণা জোগাইয়া চলিয়াছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে। মে দিবস বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়া স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের জন্য বিপুল প্রেরণার উৎসরূপে কাজ করিয়াছে।
তাহারই প্রতিফলনস্বরূপ এই সকল দেশে ছুটিসহকারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। উন্নত দেশসমূহ এই দিবসে পৃথক ছুটির ব্যবস্থা না করিলেও উহার প্রভাব উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তাই ভিন্ন প্রকারে সেই সকল দেশেও দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে আজিকে শ্রমমান লইয়া যে আলোচনা হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকের বহু অধিকার আজিকে যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশে কার্যকর হইয়াছে, উহারও পশ্চাতে রহিয়াছে মে দিবসের চেতনা। তবে ইহা সত্য, বাংলাদেশে ঘটা করিয়া দিবসটি পালিত হইলেও মজুরি ও কর্মপরিবেশ প্রশ্নে খামতি সীমাহীন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহে শ্রমিকদের জন্য এক প্রকার আইনি আশ্রয় থাকিলেও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে উহার লেশমাত্র নাই। শেষোক্ত খাতে কোটি কোটি শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার হইতে বঞ্চিত।
এই বৎসর শ্রমিক দিবস এমন সময়ে উপস্থিত, যখন গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ দেশে নূতন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। সেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শ্রম খাতের সংস্কারেও উদ্যোগী। তাহাদের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করিয়াছে, যথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ সুপারিশ রহিয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হইবে– কমিশনের এই সুপারিশ যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু কমিশন ইহাও বলিয়াছে, কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসাবে বিবেচনায় লইয়া এমন পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে, যাহাতে শ্রমিক তাঁহার পরিবারের প্রয়োজন মিটাইতে পারেন।
বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বৎসর অন্তর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করিবার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস এবং স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত সুপারিশসমূহও প্রণিধানযোগ্য। একটা সময় ছিল যখন শ্রমিক আন্দোলন বলিতে কারখানা ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংস বোঝাইত। পরিণামে নিজের রুটি-রুজি লইয়া শ্রমিকদেরই টানাপোড়েনে পড়িতে হইত। ইহার সমাধান দিয়াছিল ট্রেড ইউনিয়ন প্রথা। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার বিগত দশকসমূহে ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। উহার সহিত সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলনও বিরল হইয়া পড়ে।
আমাদের বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আলোর মুখ দেখিলে শ্রমিক-মালিক উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হইবে। সর্বোপরি দেশের বিকাশমান শিল্প খাত হইবে লাভবান। উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিরূপে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে উদ্যোক্তার যদ্রূপ অবদান, তদ্রূপ শ্রমিকেরও অবদান ব্যাপক। তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আর কোনো অবহেলা নহে। এইবারের মে দিবসে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সমকালের পক্ষ হইতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাই।