তিন কারণে কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজে গতি কম
Published: 24th, April 2025 GMT
সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হলেও অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে দুটি তদারক সংস্থার অধীন ২ হাজার ৫২৭ কারখানার মধ্যে সব সংস্কারকাজ হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ বা ৭৩৬টিতে।
শ্রমবিশেষজ্ঞ, মালিক ও শ্রমিকনেতা, তদারক সংস্থার সঙ্গে কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটাদাগে তিন কারণে তৈরি কারখানার সংস্কারকাজে গতি কমে গেছে। প্রথমত, দেশি-বিদেশি চাপ কমে যাওয়ায় ত্রুটি সংশোধনে আগ্রহ কম মালিকদের। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংকটে অনেক কারখানা ত্রুটি সংশোধনে বিনিয়োগ করতে পারছে না। তৃতীয়ত, তদারকি সংস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় পুরো কার্যক্রমের গতি কম।
ভবনধসের পর প্রথম পাঁচ বছর কারখানার সংস্কারকাজ তুলনামূলক দ্রুতগতিতে এগোলেও বর্তমানে শ্লথগতিতে চলছে। ইতিমধ্যে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা কমে এসেছে। ফলে অনেক কারখানায় নিরাপত্তাঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারকাজে অগ্রগতি কিছুটা শ্লথ হলেও বড় ধরনের ঝুঁকি নেই। অধিকাংশ কারখানা ৯০ শতাংশ ত্রুটি সংশোধন করেছে। আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কারখানা সংস্কারকাজে পিছিয়ে আছে।
বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা দুর্বল, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল সাভারের রানা প্লাজার ধস। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এই শিল্প–দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক মারা যান। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেন।
দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্প–দুর্ঘটনার পর ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। দুই জোটের অধীন প্রায় দুই হাজার কারখানার সংস্কারকাজ চলে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পর এসব কারখানা তদারকিতে নিরাপণ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। সেটিও অল্প কিছুদিনের মধ্যে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। আর অ্যাকর্ডের কারখানাগুলো ২০২০ সালের ১ জুন থেকে তদারকি করছে আরএমজি সাসটেইনিবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি)। বর্তমানে আরএসসির অধীন রয়েছে ১ হাজার ৮৬১টি পোশাক কারখানা। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত ৬৩৮টি কারখানায় সব ধরনের ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে।
আরএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আরএসসি কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাঝুঁকি হ্রাসে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারখানাগুলোতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত ঝুঁকি সংস্কারের অগ্রগতির হার ৮৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।
অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাইরে থাকা ১ হাজার ৫৪৯ কারখানা জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীন পরিদর্শিত হয়েছিল। সংশোধন সমন্বয় সেল (আরসিসি) নামে একটি প্রকল্পের অধীন কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ তদারক করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে ইন্ডাস্ট্রি সেফটি ইউনিট গঠনের মাধ্যমে সংস্কারকাজ শেষ করার চেষ্টা করছে ডিআইএফই।
ইন্ডাস্ট্রি সেফটি ইউনিটের অধীন বর্তমানে ৬৬৬টি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৯৮টি কারখানা শতভাগ সংস্কারকাজ শেষ করেছে। বাকিগুলোর সংস্কারকাজের অগ্রগতি কম। যদিও দুই শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
গত এক বছরে অগ্রগতি ভালো বলে দাবি করলেন ডিআইএফইর উপমহাপরিদর্শক মো.
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াকার্স ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) সভাপতি বাবুল আখতার প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার সংস্কারকাজ ব্যয়বহুল। আগে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সেই ব্যয় বহন করত। এখন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান একাংশ ও বাকিটা মালিকদের বহন করতে হয়। সে জন্য মালিকদের মধ্যে একধরনের অনীহা আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক অ য কর ড
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।