ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল। তীব্র তাপ এবং প্রবল বাতাসের কারণে বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। শহরগুলো থেকে ইতোমধ্যে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগুনের কারণে শহরের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। লাইনের কাছে আগুন লাগায় ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের মোশাভ তারুমের কাছে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। বিমানের সহায়তায় আগুন নেভানোর সময় প্রবল বাতাসের কারণে আগুন আরও তীব্র হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এর পর বেইট শেমেশ শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে আগুন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এশতাওল, বেইট মেইর এবং মেসিলাত জিওন শহর থেকেও বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ আগুনের ফলে সড়কের গাড়িচালকরা তাদের যানবাহনকে ফেলেই শহর ছাড়তে বাধ্য হন।
আরো পড়ুন:
ভয়াবহ দাবানলের হুমকিতে ক্যালিফোর্নিয়ার ৬০ লাখের বেশি মানুষ
সত্যি কি দাবানলে পুড়েছে অস্কারের ট্রফি?
জনসাধারণকে সাবধানতা অবলম্বন করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে জেরুজালেমে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে অ্যাডহক কমান্ড সেন্টারে জরুরি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
দমকল ও উদ্ধার পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, একাধিক দাবানল নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ কাজ করার সময় তিনজন দমকলকর্মী এবং একজন নারী পুলিশ আহত হয়েছেন। এর আগে, দমকল ও উদ্ধার কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছিলেন, আগুনের ফলে নয়জন সামান্য আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাতজন দমকলকর্মী এবং দুজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছে।
ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ অথরিটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগুন নেভাতে শতাধিক অগ্নিনির্বাপক দল ছাড়াও, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিকস ডিরেক্টরেটের দমকল ইঞ্জিনগুলো অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার পরিষেবা এবং ইসরায়েলি পুলিশের পাশাপাশি কাজ করেছে।
ইসরায়েলের আবহাওয়া দপ্তর মঙ্গলবার এবং বুধবার ‘চরম’ আবহাওয়ার সতর্কতা জারি করেছিল, যার ফলে রেকর্ড তাপমাত্রার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলে বেশিরভাগ বনের আগুন মানুষের দ্বারা সৃষ্ট এবং সাধারণত অবহেলার ফল।
দীর্ঘ ও শুষ্ক গ্রীষ্মকালের কারণে ইসরায়েলে এর আগেও অনেকবার দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮৯, ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৫, ২০১৯, ২০২১ এবং ২০২৩ সালে বড় ধরনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
মাকিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চুক্তি বাতিলকারী দেশগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর তার সেই বার্তাটি হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দাঙ্গাবাজ দেশ, যাকে বিশ্বাস করা যায় না।
শুল্ক স্থগিতাদেশের সময় চীন ছাড়া সবদেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাম্প যে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন, সেই সময়ের মধ্যে চীনা কর্মকর্তারা বিদেশী সরকারগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, একবার এই চুক্তিগুলো কার্যকর হয়ে গেলে, তিনি চান মার্কিন মিত্ররা ‘একটি দল হিসেবে চীনের সাথে যোগাযোগ করুক’, যাতে মার্কিন পক্ষ আলোচনায় আরো বেশি সুবিধা পায়।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত মার্কিন মিত্ররা নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভর করে এবং অর্থনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের উৎসাহ রয়েছে। অবশ্য চীন আরো সমান তালে শুল্ক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের পর থেকে বেইজিং মার্কিন রপ্তানি থেকে তার অর্থনীতিকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশটিতে নিবেদিতপ্রাণ এবং সক্রিয় সৈন্য সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী রয়েছে।
শি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার সরকার ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে যে, অন্য পক্ষ, অর্থাৎ চীনকে উত্তেজনা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, চীন নিজেকে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং অন্যান্য দেশকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক উ জিনবো বলেন, “এটি কেবল চীন-মার্কিন সম্পর্কে নয়। এটি আসলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে।”
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া উ জানান, অন্যান্য সরকারেরও বুঝতে হবে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা তাদের উপকার করেছে।
তিনি বলেন, “যদি চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, তাহলে আমেরিকা কীভাবে তাদের ৯০ দিনের বিরতি দিত। চীনের উপর শুল্ক আরোপের ফলে ট্রাম্প অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ বন্ধ করার জন্য আবরণ পেয়েছেন। তাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত।”
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই সোমবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ব্লকের দেশগুলোকে ট্রাম্পের দাবি প্রতিহত করার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আপনি যদি নীরব থাকেন, আপস করেন এবং পিছু হটতে চান, তাহলে এটি কেবল বুলিকে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।”
তার এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সাবটাইটেলসহ একটি ভিডিওতে ওয়াশিংটনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গত শতাব্দীতে জাপানি রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন পদক্ষেপ তোশিবার মতো কোম্পানিগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ওয়াং ই বলেছেন, “একজন ধর্ষকের কাছে মাথা নত করা ঠিক তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিষ পান করার মতো, এটি কেবল সংকটকে আরো গভীর করে তোলে। চীন পিছু হটবে না যাতে দুর্বলদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।”
ঢাকা/শাহেদ