গরমে সজনে ডাল বা তরকারি কম বেশি সবারই পছন্দ। সুস্বাদু এই সবজির রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। সজনে একটি ওষুধি গুণে ভরপুর অন্যতম ভেষজ উদ্ভিদ। সজনের ডাঁটা যেমন সুস্বাদু একটি সবজি, তেমনি এটি পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় সজনের বহুল ব্যবহার রয়েছে।
সজনে বা মরিঙ্গা একটি ‘সুপারফুড’ হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সজনে পাতায় ভিটামিন এ, সি ও ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন ও ফাইবার পাওয়া যায়। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী এবং ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে। তাই প্রতিদিনের খাবারে সজনে যুক্ত করলে শরীর প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি পায়। এছাড়াও সজনা খেলে আরও উপকার পাওয়া যায়। যেমন_
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
সজনে পাতায় থাকা কিউয়ারসেটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তচাপ কমাতে কার্যকর। এটি রক্তনালীর উপর চাপ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। যারা হাই ব্লাড প্রেশারে ভোগেন, তাদের জন্য সজনে খুবই উপকারী একটি খাবার।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
সজনে পাতা ও ডাঁটা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাজনের নির্যাস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। নিয়মিত সজনে খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সজনেয় রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে এবং নানা ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি
সজনের পাতায় থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং বদহজম, গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা কমায়। সজনে পাতা বা ডাঁটার তরকারি নিয়মিত খেলে হজম ভালো হয়।
ত্বক ও চুলের যত্নে
সজনের তেল এবং পাতার গুঁড়া ত্বকের যত্নে বহুল ব্যবহৃত। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ব্রণ, র্যাশ ও চুলকানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। চুল পড়া কমাতে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতেও সজনের তেল কার্যকর।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ
সজনে পাতায় উচ্চমাত্রার আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারীদের জন্য আয়রনের ঘাটতি পূরণে সজনা একটি প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। নিয়মিত সজনে খেলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমে।
অ্যান্টিক্যান্সার গুণ
গবেষণায় দেখা গেছে, সজনেতে উপস্থিত কিছু যৌগ যেমন নিইজিমাইসিন এবং গ্লুকোসাইনোলেট, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করে। যদিও এখনো এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে প্রাথমিকভাবে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
মাতৃদুগ্ধ বাড়ায়
সজনে গাছকে "গ্যালাক্টাগগ" বলা হয়, অর্থাৎ এটি মায়ের দুধ উৎপাদনে সহায়ক। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য সজনার পাতা বা ডাঁটার তরকারি খুবই উপকারী।
তবে যারা কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ খান বা গর্ভবতী, তারা সাজনে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ য য কর দ র জন য সজন র উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।