Samakal:
2025-05-01@02:47:06 GMT

সজনে' র যত উপকারিতা

Published: 24th, April 2025 GMT

সজনে' র যত উপকারিতা

গরমে সজনে ডাল বা তরকারি কম বেশি সবারই পছন্দ। সুস্বাদু এই সবজির রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। সজনে একটি ওষুধি গুণে ভরপুর অন্যতম ভেষজ উদ্ভিদ। সজনের ডাঁটা যেমন সুস্বাদু একটি সবজি, তেমনি এটি পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় সজনের বহুল ব্যবহার রয়েছে।

সজনে বা মরিঙ্গা একটি ‘সুপারফুড’ হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সজনে পাতায় ভিটামিন এ, সি ও ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন ও ফাইবার পাওয়া যায়। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী এবং ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে। তাই প্রতিদিনের খাবারে সজনে যুক্ত করলে শরীর প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি পায়। এছাড়াও সজনা খেলে আরও উপকার পাওয়া যায়। যেমন_

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
সজনে পাতায় থাকা কিউয়ারসেটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তচাপ কমাতে কার্যকর। এটি রক্তনালীর উপর চাপ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। যারা হাই ব্লাড প্রেশারে ভোগেন, তাদের জন্য সজনে খুবই উপকারী একটি খাবার।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
সজনে পাতা ও ডাঁটা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাজনের নির্যাস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। নিয়মিত সজনে খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সজনেয় রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে এবং নানা ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি
সজনের পাতায় থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং বদহজম, গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা কমায়। সজনে পাতা বা ডাঁটার তরকারি নিয়মিত খেলে হজম ভালো হয়।

ত্বক ও চুলের যত্নে
সজনের তেল এবং পাতার গুঁড়া ত্বকের যত্নে বহুল ব্যবহৃত। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ব্রণ, র‍্যাশ ও চুলকানি প্রতিরোধে সাহায্য করে। চুল পড়া কমাতে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতেও সজনের তেল কার্যকর।

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ
সজনে পাতায় উচ্চমাত্রার আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারীদের জন্য আয়রনের ঘাটতি পূরণে সজনা একটি প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। নিয়মিত সজনে খেলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যা কমে।

অ্যান্টিক্যান্সার গুণ
গবেষণায় দেখা গেছে, সজনেতে উপস্থিত কিছু যৌগ যেমন নিইজিমাইসিন এবং গ্লুকোসাইনোলেট, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সাহায্য করে। যদিও এখনো এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে প্রাথমিকভাবে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক বলে মনে করা হয়।

মাতৃদুগ্ধ বাড়ায়
সজনে গাছকে "গ্যালাক্টাগগ" বলা হয়, অর্থাৎ এটি মায়ের দুধ উৎপাদনে সহায়ক। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য সজনার পাতা বা ডাঁটার তরকারি খুবই উপকারী।

তবে যারা কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ খান বা গর্ভবতী, তারা সাজনে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ য য কর দ র জন য সজন র উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।

অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।

সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আরো পড়ুন:

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।

রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।

‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।

একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’

তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।

বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।

‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।

‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’

একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’

জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’

তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’

বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ