অ-তালিকাভুক্ত-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান ১০ শতাংশ চায় বিএসইসি
Published: 24th, April 2025 GMT
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অ-তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান পূর্বের ন্যায় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সচিব নাজমা মোবারকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
দেশি বা বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করতে এ করসুবিধা প্রধান আবশ্যক, যা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে, বাজারকে অধিকতর শক্তিশালী, গতিশীল ও স্থিতিশীল করতে এ করসুবিধা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করে বিএসইসি।
আরো পড়ুন:
৯ মাসে ডরিন পাওয়ারের মুনাফা বেড়েছে ৩৬.
পুঁজিবাজারে টানা দরপতন
আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৮০২ পয়েন্ট
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরেই মৌলভিত্তিসম্পন্ন, লাভজনক ও স্বচ্ছ কোম্পানির অভাবে ভুগছে। এর ফলে বাজারের গভীরতা অত্যন্ত সীমিত, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি কার্যকর ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের পথে বড় বাধা। এই পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। বাংলাদেশে বহু লাভজনক দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে, যাদের ব্যবসা শক্তিশালী এবং আয়ও উল্লেখযোগ্য।
তবে এসব কোম্পানির অধিকাংশই এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো-তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের অভাব। ২০২৪ সালের অর্থ আইন-এর তফসিল (২), অনুচ্ছেদ (খ) এর দফা (ক) এর (অ) অনুযায়ী বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২২.৫ শতাংশ এবং বর্ণিত অনুচ্ছেদ ও দফার (ক) এর (ঈ) অনুযায়ী অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার সাড়ে ২৭.৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত ও অভালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে এই ব্যবধান মাত্র ৫ শতাংশ, যা ভালো ও মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওযার ক্ষেত্রে আরো নিরুৎসাহিত করছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তারা সাধারণত নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করে, সুশাসন মেনে চলে, এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে। করহারে ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে এই দায়িত্ববান আচরণকে পুরস্কৃত করা সম্ভব হবে এবং অন্যান্য ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে। ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে, কারণ তারা টেকসই আয় ও সুশাসনের আশ্বাস পায়। এটি বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করে এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায়। এছাড়া ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। আপাতদৃষ্টিতে কর ছাড় মানেই রাজস্ব ঘাটতি মনে হলেও, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে ব্যবসার পরিধি ও করনির্ভরতা উভয়ই বাড়ে।
কর আদায়ে স্বচ্ছতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে মোট রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। অনেক উন্নয়নশীল ও মধ্য-আয়ের দেশ, যেমন মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ইত্যাদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কর সুবিধা দিয়ে সফলভাবে ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারমুখী করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে অধিকাংশ করপোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হলে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ কমে আসবে ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস পাবে। অন্যদিকে বেশি সংখ্যক ও বৈচিত্র্যময় কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বাজারের গুটি কয়েক কোম্পানির মূল্য ওঠানামার ওপর নির্ভরতা কমে যাবে। এতে সূচকের উঠানামায় অস্থিরতা হ্রাস পায়, যা বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক বার্তা দেয়।
চিঠিতে বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, দেশি/বিদেশি/বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ যাতে পুঁজিবাজার হতে মূলধন উত্তোলনে উৎসাহিত হয় সেজন্য কর সুবিধা প্রধান আবশ্যক যা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ নানাবিধ খরচ বহন করতে হয় বিধায় তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্যে উপরিল্লিখিত করহারের ব্যবধান পূর্বের ন্যায় সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এই পদক্ষেপ পুঁজিবাজারে গুণগতমানসম্পন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে, বাজারকে অধিকতর শক্তিশালী, গতিশীল ও স্থিতিশীল করে তুলবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের আর্থিক খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ক ভ ক ত ক ম প ন র করহ র ত ল ক ভ ক ত ক ম প ন র কর ব যবধ ন ব এসইস আর থ ক উল ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ জন্য দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তুর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমরা পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাবো। আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদের আগেই এ বৈঠকের বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএসইসি। আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।”
তবে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএসইসির এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছি। একই সঙ্গে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করা হবে। এ জন্য আজকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
ঢাকা/এনটি/ইভা