যুদ্ধবিরতির মাঝেই মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর তাণ্ডব
Published: 25th, April 2025 GMT
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর ২০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল জান্তা সরকার। সেই ঘোষণার মধ্যেও রাখাইন ও কাচিন রাজ্যে ব্যাপক বিমান ও স্থল হামলা চালিয়েছে তারা। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৮০ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
রাখাইনের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরাকান আর্মির তথ্যমতে, ২ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দখলে থাকা এলাকাগুলোতে জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমান, ড্রোন, নৌকা, আর্টিলারি এবং আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করে ৪০৯টি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় দু’জন নিহত এবং পাঁচ শিশুসহ অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে অন্তত ২৫টি ভবন, যার মধ্যে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
বিশেষ করে গত ১৯ এপ্রিল কিয়াউকটাউ শহরের আবাসিক এলাকায় তিনটি যুদ্ধবিমানের সাহায্যে রকেট, ক্লাস্টার বোমা ও ৫০০ পাউন্ডের বেশি বোমা ফেলা হয়। এতে একজন নিহত ও ২০ জন আহত হন। এ ছাড়া ২২ এপ্রিল জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিরতির সময় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বললেও, রাখাইনের কিয়াউকফিউ শহরের একটি গ্রামে তাদের আত্মঘাতী ড্রোন হামলায় এক নারী নিহত হন। আরাকান আর্মি জানিয়েছে, তারা রাখাইনের ১৭টির মধ্যে ১৪টি উপজেলা এবং পাশের চিন রাজ্যের পলেটোয়া শহর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যের জেড (পান্না) খনির কেন্দ্র হপাকান্ত শহর পুনর্দখলের জন্য বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি জানিয়েছে, প্রায় এক হাজার জান্তা সেনা দু’দিক থেকে শহরটির দিকে এগোচ্ছে। সেখানে বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল হামলাও চালানো হচ্ছে। বর্তমানে ভামো ও হপাকান্ত শহরে নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে বলে জানিয়েছে বিদ্রোহীরা।
গত ২৮ মার্চের শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে একতরফা অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করলেও, তা মানেনি জান্তা বাহিনী। বরং তারা রাখাইনের বাইরেও মিয়ানমারের অন্তত ১১টি রাজ্য ও অঞ্চলে ১৫০টির বেশি বিমান ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। এই হামলার বেশির ভাগই হয়েছে বেসামরিক জনগণের ওপর, এমনকি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও রেহাই পায়নি। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১২০ জন। খবর ইরাবতীর।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র খ ইন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।