পৃথিবীতে একেক প্রাণীর জীবনকাল একেক রকম কেন
Published: 26th, April 2025 GMT
পৃথিবীতে বেশ কিছু প্রাণী খুবই অল্প সময় বাঁচে, আবার কিছু প্রাণী দীর্ঘজীবী হয়। আর তাই তো কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন বেঁচে থাকা ক্ষুদ্র পতঙ্গের পাশাপাশি শত শত বছর ধরে টিকে থাকা প্রাণীর দেখা মিলে থাকে পৃথিবীতে। বিভিন্ন প্রাণীর জীবনকাল জিনগত বৈশিষ্ট্য, পরিবেশগত প্রভাব, খাদ্যাভ্যাস, আকার, বিপাকীয় হার ও খাদ্যশৃঙ্খলের ওপর নির্ভর করে। ক্ষুদ্র প্রাণীদের মধ্যে সাধারণত স্বল্প সময়ের জীবনচক্র দেখা যায়। মেফ্লাই নামক এক ধরনের জলজ পতঙ্গের পূর্ণাঙ্গ জীবনকাল মাত্র কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের শারীরিক গঠন এবং বিপাক হার দ্রুত হওয়ায় জীবনচক্রও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে পানিতে ভাসমান লার্ভা এক বছরের মতো বাঁচতে পারে। তুলনামূলকভাবে ধীরগতির বিপাক হার এবং জটিল শারীরিক গঠন বিভিন্ন প্রাণীকে দীর্ঘ জীবন ধারণে সাহায্য করে।
প্রাণীর আকারও তার জীবনকালের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। সাধারণত বড় আকারের প্রাণীগুলো ছোট প্রাণীদের তুলনায় দীর্ঘজীবী হয়। বড় প্রাণীদের শারীরিক বৃদ্ধি ও প্রজনন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়। আবার শিকারি প্রাণীর সংখ্যা কম থাকায় বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। একটি ছোট পাখি কয়েক বছর বাঁচলেও বিশাল তিমি এক শ বছরের বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকে। স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে হাতি ৭০ থেকে ৮০ বছর এবং কচ্ছপ ১৫০ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
বিপাকীয় হার প্রাণীর জীবনকালের ওপরে প্রভাব ফেলে থাকে। আর তাই উচ্চ বিপাকীয় হারের প্রাণীরা দ্রুত শক্তি ব্যবহার করে বলে তাদের কোষের ক্ষয়ও দ্রুত হয়। ধীর বিপাকীয় হারের প্রাণীরা ধীরে ধীরে শক্তি ব্যবহার করে, ফলে তাদের কোষের ক্ষয়ও তুলনামূলকভাবে কম হয়। ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ছুঁচোর বিপাক হার খুব বেশি হওয়ায় তাদের জীবনকালও তুলনামূলকভাবে কম। হামিংবার্ড ৩ থেকে ৫ বছর বেঁচে থাকে।
শিকারি-শিকার সম্পর্কও প্রাণীর জীবনকালকে প্রভাবিত করে। যেসব প্রাণীর শিকারির সংখ্যা বেশি, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে। তারা দ্রুত প্রজননের মাধ্যমে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আবার যেসব প্রাণীর কোনো প্রাকৃতিক শত্রু নেই, তারা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় ও দীর্ঘ জীবন লাভ করে। শিকারি না থাকার কারণে দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী অনেক প্রাণীকে ভূখণ্ডের একই প্রজাতির প্রাণীদের তুলনায় দীর্ঘজীবী হতে দেখা যায়।
কিছু ব্যতিক্রমী প্রাণী তাদের দীর্ঘ জীবনকালের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। গ্রিনল্যান্ড হাঙর প্রায় ৪০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘজীবী প্রজাতি এসব হাঙর। আর্কটিক বোহেড তিমি ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে বাঁচতে পারে। অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে কিছু স্পঞ্জ ও কোরাল সহস্রাব্দ ধরে বেঁচে থাকতে সক্ষম।
হাইড্রা নামক ছোট জলজ প্রাণীর শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনরুদ্ধার করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সঠিক পরিবেশে হাইড্রা তাত্ত্বিকভাবে অমর। এই প্রাণীর কোষ নিয়মিতভাবে নবায়ন হয় বলে হাইড্রার আপাত ধ্বংস নেই। টারডিগ্রেড নামের ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীও চরম পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, কাচের স্পঞ্জ পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণী। এরা ১৫ হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়।
সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ণ র জ বনক ল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।