মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা ইমানের শর্ত
Published: 26th, April 2025 GMT
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও সকল মানুষ থেকে প্রিয়তর না হব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪ ও ১৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৪; সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৫,০৩৫)
কাছাকাছি বর্ণনা অনেকগুলো হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে। হাদিসগুলো এত স্পষ্ট যে, এর কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.
নবী প্রেম সম্পৃক্ত খোদাপ্রেমের সঙ্গে
কোরআনে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আপনি বলে দিন, তোমাদের পিতামাতা, সন্তানসন্ততি, ভাই-ভগ্নী, স্ত্রী-পরিজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, ধন-সম্পদ যা তোমরা উপার্জন করেছ, সেই ব্যবসা যার মন্দার আশঙ্কা তোমরা কর এবং ঘর-বাড়ি যা তোমরা ভালোবাস, এসব যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তার পথে লড়াই করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয়, তবে তোমরা আল্লাহ নির্দেশ পাঠানো পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আল্লাহ পাপাচারীদের সুপথ দেখান না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ২৪)
আরও পড়ুনজীবনে একবার হলেও যে নামাজ পড়তে বলেছেন নবীজি (সা.)১৩ মার্চ ২০২৫রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে থাকবে, সে ইমানের স্বাদ অনুভব করবে। ১. আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে অন্য সবকিছু থেকে প্রিয় হবে। ২. মানুষকে সে কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে। ৩. (বিশ্বাসী হওয়ার পর) অবিশ্বাসী অবস্থায় ফিরে যাওয়াকে সে এত অপছন্দ করবে, যতটা আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৩)
পূর্ণ প্রেম পূর্ণ ইমান
আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) বলেন, ‘আমরা নবীজির (সা.) সঙ্গে ছিলাম। তিনি ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর হাত ধরে ছিলেন। ওমর (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, নিজের প্রাণ ছাড়া আর সবকিছুর চেয়ে আপনি আমার কাছে বেশি প্রিয়।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘না, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, (তুমি পরিপূর্ণ মুমিন হবে না) যতক্ষণ আমি তোমার কাছে তোমার নিজের চেয়ে বেশি প্রিয় না হব। ওমর (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, এখন থেকে আপনি আমার কাছে আপন প্রাণের চেয়ে বেশি প্রিয়।’ নবীজি বললেন, ‘হ্যাঁ, ওমর, এবার হয়েছে।’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৬৩২)
আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল ছ ন আল ল হ বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা