প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে গিয়ে মৃত্যুশয্যায় নিজাম
Published: 30th, April 2025 GMT
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন গত ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাত খাওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।
২০১৪ সালে মরহুম রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে রান্না করা খাবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফেলে দেন। এ ঘটনার পর থেকে তিনি ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন।
এই সিদ্ধান্তের পর থেকে তার শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। ধীরে ধীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে। সম্প্রতি জানা গেছে, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলমান ছিল।
নিজাম উদ্দিনের এই ঘটনা সম্প্রতি বিএনপির মিডিয়া সেল তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করলে বিষয়টি নজরে আসে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
তার নির্দেশে বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধিদল ফরিদপুরে নিজাম উদ্দিনের খোঁজখবর নিতে যান। সেই দলে ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা.
তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে নিজাম উদ্দিনের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার টিভি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহজাহান আলী বলেন, “নিজাম উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছেন। তার শারীরিক অবস্থা জটিল। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আসছিলাম। তবে তার অবস্থা বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা প্রয়োজন ছিল। আমরা তার পরিবার ও দলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এসময় ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনসহ জেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নিজাম উদ্দিন বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত ভাত খাওয়া থেকে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞায় অটল রয়েছেন। এতে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে পড়ছে। এ কারণে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
নিজাম উদ্দিনের এই অবস্থা এবং তার প্রতিজ্ঞার বিষয়টি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
ঢাকা/তামিম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।