আবাসিক এলাকায় পশুর হাট না বসানোর দাবিতে আফতাবনগরে বিক্ষোভ
Published: 2nd, May 2025 GMT
রাজধানীর আফতাবনগরে আবাসিক এলাকায় পশুর হাট বসানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত জায়গা সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়ে হাট বসাতে চায়। কোনোভাবেই আবাসিক এলাকায় পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না।
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে আফতাবনগরের মসজিদগুলো থেকে বের হয়ে বাসিন্দারা জড়ো হন আড্ডার মোড়ে। সেখানে তাদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন।
এতে লেখা ছিল- ‘কোনোভাবেই আফতাবনগরে গরুর হাট বসানো যাবে না’, ‘আবাসিক এলাকায় গরুর হাট মানি না মানব না’ ইত্যাদি। এসময় তারা হাট না বসানোর দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আফতাবনগর সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বাসিন্দারা মানববন্ধনে অংশ নেন। পরে তারা একটি মিছিল বের করেন। সেটি আফতাবনগরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
মানববন্ধনে এলাকাবাসীর পক্ষে স্থায়ী বাসিন্দা কাজী আলমগীর বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এই জায়গা তো ব্যক্তি মালিকানার, প্লট, ফ্ল্যাট মালিক আমরা এলাকাবাসী। আমাদের ব্যক্তিগত জায়গায় সিটি কর্পোরেশন কীভাবে হাট বসাতে চায়। এখানে হাট বসলে পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত আমাদের নানা সমস্যা পোহাতে হয়। নোংরা, দুর্গন্ধে আমরা টিকতে পারি না।
তিনি বলেন, আফতাবনগরে ৮ হাজার প্লট রয়েছে, এর মধ্যে ৫ হাজার প্লটে মানুষ বসবাস করছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন, কাজ শুরুর অপেক্ষায় আছে। এখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, এতিমখানা, হাসপাতাল আছে। এখানে কেন হাট বসবে। তাও আবার ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায়। অন্যবার হাট বসানোর পরে এমন অবস্থা হয়েছে– মানুষ অসুস্থ হয়েছে কিন্তু সেই রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার অবস্থা থাকত না। সবমিলিয়ে আমরা কোনোভাবেই এবার আফতাবনগরে কোরবানির পশুর হাট বসতে দেবো না।
স্থানীয় এক মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যবার গরুর হাটের অপরিকল্পিত পানির লাইনের সংযোগ এবং পরে সেগুলো সঠিকভাবে মেরামত না করার কারণে এলাকাবাসীকে সারা বছর ময়লা পানি ব্যবহার করতে হয়েছে। গরুর হাট শেষ হওয়ার পরও ময়লা আবর্জনা মাসের পর মাস পরিষ্কার না করায় এলাকাবাসীকে দুর্গন্ধ ও মশার অত্যাচারে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়েছে। তাছাড়া রামপুরা ব্রিজ প্রধান সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। তাই আমরা এলাকাবাসী আমাদের ব্যক্তিগত জায়গায় এবার গরুর হাট বসতে দেবো না।
আফতাবনগর সোসাইটির নেতা মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা এবার কোনোভাবেই হাট বসতে দেবো না। আমরা এলাকাবাসী একতাবদ্ধ, তাই হাট বসানোর পাঁয়তারা করলে আমরা সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত রুখে দেবো। আমরা কোনোভাবেই আফতাবনগরকে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন ও বসবাসের অনুপযোগী হতে দেবো না।
মানববন্ধনে এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বাড্ডা থানাধীন আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সিটি, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের একটি বৃহৎ আবাসিক এলাকা। বর্তমানে এখানে প্রতি ব্লকে প্রচুর পরিমাণ ইমারত নির্মিত হয়েছে এবং বিচারপতি, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ প্রায় তিন লাখ মানুষ বসবাস করেন। এখানে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইম্পেরিয়াল কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হোস্টেল, মাদ্রাসা, সুপারশপ, বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অতীতে এখানে বাড়িঘর ও লোকসংখ্যা কম ছিল বলে গরুর হাট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে করে ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসীকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তারা বলেন, এ অবস্থায় আফতাবনগরবাসীর দুরবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি ২০২৪ এর ঈদুল আজহার আগে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করতে বাধ্য হয়। আদালত বিস্তারিত শুনে আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় গরুর হাট বসানোর ওপর স্টে-অর্ডার দেন। যার কারণে ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদের আগে দুই সিটি কর্পোরেশনই আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় গরুর হাটের টেন্ডার বাতিল করে। আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় গরু-ছাগলের হাট বসানোর অনুমতি না দেওয়ার জন্য আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে মামুনুর রশিদ, আবু তাহের কোরাইশি, দেলোয়ার হোসেনসহ আফতাবনগরের হাজারো বাসিন্দা অংশ নেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক ব স হ ট বসত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমিকদের আবাসনসহ ৯ দফা দাবিতে মানববন্ধন
শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করাসহ ৯ দাবিতে মানববন্ধন করেছে হস্তশিল্প, কারচুপি ও হ্যান্ড এমব্রয়ডারি শ্রমিক ফেডারেশন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মো. ইব্রাহীম হাসান মিঠু।
তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিক শ্রমিক সংগঠন, অব্যবহৃত শ্রম আইন এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে আটকে থাকা কোটি শ্রমজীবী মানুষের করুণ বাস্তবতায় মহান মে দিবস আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
হস্তশিল্প, কারচুপি ও হ্যান্ড এমব্রয়ডারি শ্রমিক ফেডারেশনের ৯ দাবি হলো
১) শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বয়স্ক শ্রমিকদের ভাতা দিতে হবে।
২) সরকারি উদ্যোগে বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে হবে। কর্মস্থলে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইনকোয়েরি সেল গঠন করতে হবে।
৩) যখন তখন শ্রমিককে বহিষ্কার করা যাবে না। বর্তমান বাজার অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) ভারতীয়সহ বিদেশি কমপ্লিট পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫) সময়মতো মজুরি ও ওভার টাইমের টাকা দিতে হবে।
৬) হস্তশিল্প, কারচুপি ও হ্যান্ড এমব্রয়ডারি শিল্পকে বাঁচাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) শ্রম আইন বাস্তবায়নে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৮) শ্রম আদালতের সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন করতে হবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিতে সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে।
৯) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও স্বতন্ত্র শ্রমিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে তাদের স্বাস্থ্য, আবাসন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ বাস্তবায়নে নিরপেক্ষ মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
ঢাকা/এএএম/রফিক