দিন পাঁচেক আগে বিধ্বংসী এক ইনিংসে যুব ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন জাওয়াদ আবরার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের মিশনে ফিরিয়েছিলেন। এবার তার ব্যাট থেকে এলো আরো একটি সেঞ্চুরি। তাতে ছয় ম্যাচের সিরিজে ৩-১ ব‌্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

শনিবার (৩ মে) কলম্বোতে চতুর্থ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ১৪৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যে জয়ের নায়ক জাওয়াদ। ১১৫ বলে ১১৩ রান করেছেন ১৪ চার ও ৩ ছক্কায়। এর আগে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। প্রথম ওয়ানডেতে ১৪ ও মাঝে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩৮ রান করে রাখেন অবদান। চার ম‌্যাচে ২৯৫ রান করে উড়ছেন বাংলাদেশের এই যুব ওপেনার। তার আজকের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ আগে ব‌্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ৩৩৬ রান করে। জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কার যুবারা গুটিয়ে যায় ১৯০ রানে।

ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ছন্দে ব‌্যাটিং করেন জাওয়াদ। ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৫ বলে। পরের পঞ্চাশ রান পেতে খেলেন ৬০ বল। ছক্কা মেরে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। সেঞ্চুরির পর তাকে থামান নাভোদয়া। নিমসারার হাতে ক‌্যাচ দেন ১১৩ রানে। জাওয়াদের সেঞ্চুরি ছাড়াও চারে নেমে ৭৭ বলে ৮২ রান করেন রিজান হোসেন। তৃতীয় উইকেটে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন দুজন। এছাড়া, আব্দুল্লাহ ৩২, সাইমুন বসির ২৩ রান করেন। শেষ দিকে আল ফাহাদের ৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রানের ঝড়ো ইনিংসে বিশাল পুঁজি পায় বাংলাদেশ। 

আরো পড়ুন:

নির্বাচন করে বিসিবিতে আসা নিয়ে তামিমের কঠোর বার্তা

নারী ক্রিকেটে আর খেলতে পারবে না ট্রান্সজেন্ডাররা

শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভেতরে ৯৬ রানে ৩ উইকেট নেন নিমসারা। জবাব দিতে নেমে ৩৬ রানে ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সেখানেই ম‌্যাচ হেরে বসে স্বাগতিকরা। সেখান থেকে কাভিজা গামাগে ও অধিনায়ক ভিমাথ দিনসারা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। গামাগে ২৩ রানে ফিরলেও দিনসারা ফিফটি করে দায়িত্ব পালন করেন। শেষ দিকে রাসিথ নিমসারা ৩৯ রান করে পরাজয়ের ব‌্যবধান কমিয়ে আনেন। বল হাতে বাংলাদেশের সেরা আল ফাহাদ। ৪১ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া, ২টি করে উইকেট পেয়েছেন সানজিদ ও আজিজুল।

৫ মে কলম্বোর এসএসসি মাঠে সিরিজের পঞ্চম ম‌্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ