নাফ নদী থেকে তিন বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি
Published: 12th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার লেদা এলাকায় নাফ নদী থেকে তিন বাংলাদেশিকে নৌকাসহ ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। তাঁরা হলেন সিদ্দিক হোসেন (২৭), রবিউল আলম (২৭) ও মাহমুদ হোসেন (৩০)। তাঁরা তিনজনই টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব লেদার লামারপাড়ার বাসিন্দা।
আজ সোমবার দুপুরে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার লেদা–সংলগ্ন নাফ নদী থেকে তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টানা ১১ মাস সরকারি জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতের পর গত ৮ ডিসেম্বর মংডু টাউন দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির তৎপরতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের ট্রলারসহ অপহরণের ঘটনাও। জেলেরা এসব ঘটনার জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করেছেন।
হ্নীলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুরের দিকে যে তিনজনকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে, তাঁরা জেলে নন। কেন তাঁরা নাফ নদীতে গেছেন, তা নিশ্চিত হতে পারেননি তিনি। তবে স্থানীয় লোকজনকে জানিয়ে ওই তিনজন নৌকা নিয়ে নেমেছিলেন। আরাকান আর্মি তাঁদের দেখতে পেয়ে গুলি চালায়। পরে তাঁদের ধাওয়া করে আটক করে নিয়ে যায়। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী ছাড়াও স্থানীয় জেলেরা অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল হুদা স্থানীয় জেলেদের বরাত দিয়ে বলেন, নাফ নদী থেকে তিনজনকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে রাখাইন রাজ্য দখলের পর আরাকান আর্মি নাফ নদীতে মাছ আহরণসহ নৌকা চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। এর মধ্যে নাফ নদী থেকে নৌকাসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে তাঁরা জেলে, নাকি মাদক কারবারি, সেটি পরিষ্কার নয়। কারণ, ওই এলাকা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে মাদকের বড় বড় চালান জব্দের ঘটনা ঘটেছে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২০৪ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জনকে ফেরত আনা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম ন ফ নদ ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্বেগ প্রকাশ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে এক নারী ও তার দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দ্রুত, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, একদল লোক রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তার ছেলে রাসেল মিয়া (২৮) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (২২)-কে তাদের নিজ বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনায় পরিবারের আরও একজন নারী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রাথমিক অভিযোগ বা সন্দেহের ভিত্তিতে, কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, এইভাবে কাউকে প্রকাশ্যে হত্যা করা শুধুমাত্র আইনের শাসনের পরিপন্থীই নয়, এটি নাগরিক নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
এমএসএফ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, কথিত যে এ পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের বিরোধ ছিল। অথচ এদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ না করে গণপিটুনির মতো বর্বরোচিত সহিংসতা ঘটিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, যা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ, এবং মানবিক মর্যাদায় আঘাত ও চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। গণপিটুনি বা মব সহিংসতা বিচারবর্হিভূত কর্মকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই মব বা গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আসক এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসের এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত গণপিটুনির ঘটনায় কমপক্ষে ৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তিকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ, প্রমাণনির্ভর ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মামলা প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় পরিবারটির গুরুতর আহত সদস্যের নিরাপত্তা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
আসক জানায়, চলমান এই সহিংসতা রুখতে রাষ্ট্রকে এখনই কার্যকর, কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।