মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধনের খসড়ায় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (এমএনএ বা এমপিএ) বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকছে।

সংশোধিত খসড়াটি অধ্যাদেশ হিসেবে অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে জামুকার ৯৪তম সভায় মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাসহ বিদ্যমান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্র অনুমোদন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। 

আইন সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারই নন, আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এই চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা হলেন– প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বিতীয়ত, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দূতসহ অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

গত ২১ মার্চ সমকালে এ নিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। জানা গেছে, গত ৬ মে খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে উপদেষ্টা পরিষদ ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ সংজ্ঞা সংশোধন করে ফের উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়। এর আলোকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাত চৌধুরী গতকাল সমকালকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বহাল থাকবেন। এ ছাড়া খসড়ার অন্যান্য বিষয় ঠিকই আছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বর্তমানে ৩৬টি শ্রেণি রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া কার্যকর হলে বিসিএস ধারণাগত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিশ্বজনমত গঠনকারী প্রবাসী সংগঠক, মুজিবনগর, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় বদলে যাবে। এর বাইরে বেসামরিক গেজেটে থাকা প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্য থেকেও কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে সংকট দেখা দেবে। খসড়াটি অধ্যাদেশ হিসেবে প্রকাশের পর বেসামরিক গেজেটের তালিকা থেকে রণাঙ্গনে অংশ না নেওয়া অন্য শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই করবে মন্ত্রণালয়।

খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত খসড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্থ যাহারা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন, এই রূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্‌স (ইপিআর), নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স এবং আনসার সদস্য, তাহারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন।’

খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের পরিবর্তিত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘‘‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ র সহয গ ম জ বনগর উপদ ষ ট সরক র ইসল ম খসড় ট খসড় য়

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচন : কেন্দ্রে যাচ্ছে ব্যালট বাক্স-পেপার, ভোট শুরু সকাল ৯টায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ ভোট গ্রহণের সরঞ্জাম কেন্দ্রে নেওয়া শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার পর থেকে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ কার্যালয় থেকে এই সরঞ্জামগুলো সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে এই ব্যালট নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।

আজ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি একাডেমিক ভবন এবং একটি গেস্টহাউজসহ মোট ভোট কেন্দ্র ১৭টি; বুথ ৯৯০টি।

ভোটের সরঞ্জাম পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে পাঠানো হয়েছে। এ সময় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিহার জোনের ডিসি মমিনুল করিম বলেন, ভোটের সরঞ্জাম কেন্দ্রে যাচ্ছে। তারা তৎপর রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট হবে।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ ও নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে ছাত্র হল ১১টি এবং ছাত্রী হল ৬টি। ভোট গ্রহণ শেষে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে ভোট গণনা করা হবে। ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে।

আরও পড়ুনরাকসুর ভোট আজ, ৭২ বছরে নির্বাচন ১৬ বার ৪৭ মিনিট আগে

সব ফটকে কড়া নিরাপত্তা
আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় সব ফটকে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবরাহ করা পরিচয়পত্র ছাড়া তারা কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছেন না। আজ সকাল সোয়া সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এই চিত্র দেখা যায়। এই ফটক দিয়ে এই সময়ে প্রবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন প্রবেশ করছিলেন। তিনি বলেন, ভোট দিতে যাচ্ছেন। সকাল সকাল ভোট দিতে চান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ