জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শাটডাউন’ ঘোষণা
Published: 15th, May 2025 GMT
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউনের’ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা চলবে না। রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে আজ বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন এ ঘোষণা দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেলা দুইটার দিকে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের অধিকার চাইতে, আমাদের দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’
অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, আমরা কারও বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি; কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসেনি। ‘আমরা এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায্য অধিকার নিয়ে এসেছি। আমাদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়।
এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে, তা ভালো হবে না বলে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।’
এর আগে গতকাল বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ইনস্টিটিউট ও বিভাগের পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হলো।
এদিকে পুলিশের হামলার বিচার ও তিন দফা দাবিতে এখনো কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত ২৪টি বাস কাকরাইল মোড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসব বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা আন্দোলনস্থলে যান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ।
এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। এ সময় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে আন্দোলনকারীরা জানান।
পরে বেলা দুইটার দিকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেলে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
রাত ১০টার পরে অবস্থান কর্মসূচিতে আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়ে সরকার কথা শুনবে।
তবে রাত ১২টার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম) যে ব্রিফিং করেছেন, সেটি আরেকটি অস্পষ্টতা তৈরি করেছে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছি, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া আমরা কোনোভাবেই এই জায়গা ছেড়ে যাব না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
শুক্রবার জুমার পর জবি শিক্ষার্থীদের গণঅনশন
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে শুক্রবার জুমার নামজের পর জবি শিক্ষার্থীদের গণঅনশন ঘোষণা করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে ‘জবি ঐক্যের’ পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন এ ঘোষণা দেন।
অধ্যাপক ড.রইছ উদ্দীন বলেন, আমরা সরকারের নিকট আমাদের অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছিলাম। তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছে। কিন্তু আমাদের অধিকারের বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। এমনকি ৩৫ ঘণ্টা পার হলেও কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি প্রশাসন। সরকার থেকে কোন বার্তা আসেনি।
তিনি বলেন, দাবি আদায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাল জুমার পরে গণঅনশন শুরু করবে। এতে সকল সাবেক ও বর্তমান জবিয়ানদের অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিন শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে আন্দোলন স্থলে শুরু হবে জবিয়ান সমাবেশ। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে পুলিশ কর্তৃক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ১৪ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস পালনের ঘোষণা দেন তিনি।