বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলসের বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশমালা পেশ করেছে সংস্কার টাস্কফোর্স।

সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে মিউচুয়াল ফান্ড ও পাবলিক ইস্যু রুলস সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশসমূহ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে হস্তান্তর করেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স।

এ সময় বিএসইসির কমিশনার মো.

আলী আকবর উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন

৬১৭ বিও হিসাব স্থগিত

মঙ্গলবার (২০ মে) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সুপারিশমালা হস্তান্তরের সময় টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কে এ এম মাজেদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন।

সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালার বিষয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ পেশকৃত চূড়ান্ত সুপারিশমালার বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়গুলো হলো-সব মেয়াদি (ক্লোজড-অ্যান্ড) ফান্ডকে অবশ্যই ট্রাস্ট ডিডে নির্ধারিত প্রাথমিক মেয়াদ শেষে অবসায়ন (রেডিম) করতে হবে। তবে, যদি কোনো বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) উপস্থিত ইউনিটহোল্ডারদের তিন-চতুর্থাংশ (ইউনিটের মালিকানার শতাংশের ভিত্তিতে) ফান্ডটি ওপেন-এন্ড ফান্ডে রূপান্তরের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে উক্ত ফান্ড রূপান্তরিত হতে পারবে। যেসব মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ ইতোপূর্বে বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সংশোধিত বিধিমালার কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে একটি ইজিএম আহ্বান করতে হবে, যেখানে ইউনিটহোল্ডারদের রূপান্তরের বিষয়ে ভোট নেওয়া হবে। যদি ইউনিটহোল্ডারদের ৭৫ শতাংশ রূপান্তরের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে ফান্ডটি রূপান্তরিত হবে; অন্যথায় উক্ত সময় থেকে তিন মাসের মধ্যে ফান্ডটি মেয়াদ শেষ বিবেচনায় অবলুপ্ত (রেডিম) করতে হবে।

গ্রোথ, ব্যালান্সড, শরিয়াহ-অনুবর্তী, ফিক্সড ইনকাম ও মানি মার্কেট ফান্ডের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাধ্যতামূলক সম্পদ বরাদ্দ (অ্যাসেট অ্যালোকেশন) নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন: ক) একক শেয়ারে বিনিয়োগের সীমা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং একক শিল্প খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে; খ) তালিকাভুক্ত নয় এমন কোন ইক্যুইটি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে শুধুমাত্র মেইন বোর্ডে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি কর্তৃক ইস্যুকৃত বন্ড বা প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে।

মোট বার্ষিক ব্যয় অনুপাত (টোটাল অ্যানুয়াল এক্সপেন্স রেশিও) সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; ফিক্সড ইনকাম অথবা মানি মার্কেট ফান্ডের ক্ষেত্রে এই হার হবে ২ শতাংশ। মেয়াদি ফান্ডের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট বছরে অর্জিত লাভের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ইউনিটহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে হবে। বেমেয়াদি বা ওপেন-এন্ড ফান্ডের ক্ষেত্রে, প্রতি ইউনিটে ন্যূনতম লভ্যাংশ হবে ঐ বছরের অর্জিত লাভ অথবা ভার আরোপিত গড় আয় (ওয়েটেড অ্যাভারেজ এয়ার্নিংস পার ইউনিট) এই দুটির মধ্যে যেটি কম তার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ।

এদিকে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস এর বিষয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ পেশকৃত চূড়ান্ত সুপারিশমালার বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়গুলো হলো-আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশের ভিত্তিতে বিএসইসি চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করবে।

আইপিও বা পাবলিক ইস্যুর ক্ষেত্রে যারা নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের উপযুক্ত ও সঠিক (ফিট এন্ড প্রপার) মানদণ্ড ক্রিটেরিয়া) সুপারিশমালায় দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় নিরীক্ষা কার্য এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

আইপিও ভ্যালুয়েশন বা প্রাইসিং এর জন্য সুগঠিত (অর্গানাইজ) মডেল তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী কোম্পানিসমূহের ন্যায্য প্রাইসিং নিশ্চিত হবে। এর ফলে আগামীতে ভালো ও মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে।

আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ইস্যু ম্যানেজারদের সুনির্দিষ্ট দায়দায়িত্ব ও ভূমিকা (রোল) এর বিষয়ে সুপারিশমালায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে যার ফলে তাদের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। ইস্যুয়ার কোম্পানিসমূহে কর্পোরেট গভর্নেন্স বা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতের বিষয়েও সুপারিশমালায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে যার মাধ্যমে কোম্পানিসমূহে সুশাসন বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ অধিকতর সুরক্ষিত হবে।

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশমালার আলোকে আইনি সংস্কারের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে। টাস্কফোর্সের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে বিএসইসি আশা করে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রক র য় ব এসইস উল ল খ আইপ ও ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, বেড়েছে লেনদেন
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান, কমেছে লেনদেন
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ বছর মেয়াদের নতুন ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড