বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’-এ ‘লোকাল ইনভেস্টমেন্ট’ ক্যাটাগরিতে ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষে এই অর্জন দ্বারা সম্মানিত হলো স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠানটি। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর এই অর্জন নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী।  

প্রশ্ন: আপনাকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর এই অর্জনের জন্য অভিনন্দন। এই স্বীকৃতি স্কয়ার-এর ভবিষ্যৎ পথচলাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?

তপন চৌধুরী: ধন্যবাদ। এ স্বীকৃতি চিকিৎসক-কেমিস্ট থেকে শুরু করে স্কয়ার পরিবারের সকল সদস্যদের। যাদের কাজের ফলে স্কয়ার এই স্বীকৃতি পেয়েছে, আশা করি তারা সবাই অনুপ্রাণিত হবেন। 

প্রশ্ন: এ অর্জন প্রমাণ করে, জাতীয় অর্থনীতিতেও স্কয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে.

..? 

তপন চৌধুরী: নিঃসন্দেহে। প্রত্যক্ষভাবে জিডিপিতে আমাদের অবদান ০.৫%, পরোক্ষভাবে সেটা ৩.৫%। আর রাজস্বের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কে প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা, যেটা মোট রাজস্বের প্রায় ০.৬৩%। এই অঙ্কগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

প্রশ্ন: অনেকের আশঙ্কা, স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণ ঘটলে ওষুধের দাম বাড়বে। এ সমস্যা আমরা কীভাবে মোকাবেলা করতে পারি?

তপন চৌধুরী: এতদিন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে লিগ্যালি আমরা যেকোনো প্যাটেন্টের প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারতাম। ভবিষ্যতে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে, এখন অন্তত ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে সমস্যা মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বড় সমস্যা হবে না। 

প্রশ্ন: দেশের বাইরেও নিজেদের পরিসর বৃদ্ধি করছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস…। 

তপন চৌধুরী:  আমরা শুধু দেশের কথা ভাবছি না। বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলে আমাদের বেশ কিছু কোম্পানি ভালোভাবেই সুযোগটা নিতে পারবে। যেমন এই মুহূর্তে কেনিয়াতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর একটা ফ্যাক্টরি আছে, যেখানে আমরা ভালো করছি। এভাবে আমাদের নিজস্ব আয়কৃত বৈদেশিক মুদ্রা থেকেই আমরা আরও অন্যান্য দেশেও বিনিয়োগ করতে চাই।  

প্রশ্ন: সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত একটা পোস্টে আপনাকে তানজানিয়ায় স্কয়ার-এর ওষুধ পেতে দেখা গেছে…।  

তপন চৌধুরী: হ্যাঁ, তানজানিয়ার ছোট্ট একটা গ্রামের ফার্মেসিতে হঠাৎ করে আমি শেলফে দেখি, স্কয়ার ফার্মার কফ সিরাপ। খুব খুশি হই দেখে। আমি দোকানে বিক্রয়কর্মী তরুণীটিকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন সাড়া পাচ্ছে আমাদের ওষুধ। সে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে ইতিবাচক উত্তর দেয়।  

প্রশ্ন: টেকসই জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিতে স্কয়ার-এর মতো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কতোটা দায়বদ্ধ?  

তপন চৌধুরী: আমরা যখনই কোনো শিল্প-কলকারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নিই, বিল্ডিং বা কারখানার ডিজাইনগুলো এমনভাবে করি যেন প্রকৃতির যতোটা কম সম্ভব ক্ষতি করে কাঠামোগুলো তৈরি হয়। এজন্যই দেখবেন, আমাদের চারপাশটা বেশ সবুজ। আমাদের স্থাপনা নির্মাণে জলাশয় কিংবা পাখিদের ক্ষতি করা হয়নি। প্রকৃতির সুরক্ষায় সবার মতো আমরাও দায়বদ্ধ, এবং সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা কাজ করে যাই। 

প্রশ্ন: এবছর স্কয়ার–এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ। এ উপলক্ষে আপনারা কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন? 

তপন চৌধুরী: অনেক উদ্যোগই গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, আমরা তার সন্তানেরা ‘অনিতা-স্যামসন ট্রাস্ট’ গঠন করেছি। এই ট্রাস্টের আওতায় একটি মেডিকেল কলেজ, একটি নার্সিং কলেজ এবং একটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেন সব ধরনের মানুষ এর মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। 

 প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে আপনার ভাবনা যদি শেয়ার করতেন। 

তপন চৌধুরী: আমার চিন্তার অনেকখানি জুড়েই আমার নাতিরা থাকে। তারাও তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরই অংশ। আমি যখন থাকবো না, আমি চাইবো তারা যেন বলার সুযোগ না পায়, যে আমার দাদুরা আমাদের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে যাননি। সেই সুন্দর পৃথিবী, সুন্দর দেশ গড়ে তোলার জন্যই কাজ করে গেছি এবং কাজ করে যাবো।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তপন চ ধ র স য মসন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ