স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষে ‘অনিতা-স্যামসন’ ট্রাস্টের উদ্যোগে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে: তপন চৌধুরী
Published: 21st, May 2025 GMT
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’-এ ‘লোকাল ইনভেস্টমেন্ট’ ক্যাটাগরিতে ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষে এই অর্জন দ্বারা সম্মানিত হলো স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠানটি। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর এই অর্জন নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী।
প্রশ্ন: আপনাকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর এই অর্জনের জন্য অভিনন্দন। এই স্বীকৃতি স্কয়ার-এর ভবিষ্যৎ পথচলাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?
তপন চৌধুরী: ধন্যবাদ। এ স্বীকৃতি চিকিৎসক-কেমিস্ট থেকে শুরু করে স্কয়ার পরিবারের সকল সদস্যদের। যাদের কাজের ফলে স্কয়ার এই স্বীকৃতি পেয়েছে, আশা করি তারা সবাই অনুপ্রাণিত হবেন।
প্রশ্ন: এ অর্জন প্রমাণ করে, জাতীয় অর্থনীতিতেও স্কয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে.
..?
তপন চৌধুরী: নিঃসন্দেহে। প্রত্যক্ষভাবে জিডিপিতে আমাদের অবদান ০.৫%, পরোক্ষভাবে সেটা ৩.৫%। আর রাজস্বের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কে প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা, যেটা মোট রাজস্বের প্রায় ০.৬৩%। এই অঙ্কগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্ন: অনেকের আশঙ্কা, স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণ ঘটলে ওষুধের দাম বাড়বে। এ সমস্যা আমরা কীভাবে মোকাবেলা করতে পারি?
তপন চৌধুরী: এতদিন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে লিগ্যালি আমরা যেকোনো প্যাটেন্টের প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারতাম। ভবিষ্যতে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে, এখন অন্তত ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে সমস্যা মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বড় সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: দেশের বাইরেও নিজেদের পরিসর বৃদ্ধি করছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস…।
তপন চৌধুরী: আমরা শুধু দেশের কথা ভাবছি না। বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলে আমাদের বেশ কিছু কোম্পানি ভালোভাবেই সুযোগটা নিতে পারবে। যেমন এই মুহূর্তে কেনিয়াতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর একটা ফ্যাক্টরি আছে, যেখানে আমরা ভালো করছি। এভাবে আমাদের নিজস্ব আয়কৃত বৈদেশিক মুদ্রা থেকেই আমরা আরও অন্যান্য দেশেও বিনিয়োগ করতে চাই।
প্রশ্ন: সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত একটা পোস্টে আপনাকে তানজানিয়ায় স্কয়ার-এর ওষুধ পেতে দেখা গেছে…।
তপন চৌধুরী: হ্যাঁ, তানজানিয়ার ছোট্ট একটা গ্রামের ফার্মেসিতে হঠাৎ করে আমি শেলফে দেখি, স্কয়ার ফার্মার কফ সিরাপ। খুব খুশি হই দেখে। আমি দোকানে বিক্রয়কর্মী তরুণীটিকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন সাড়া পাচ্ছে আমাদের ওষুধ। সে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে ইতিবাচক উত্তর দেয়।
প্রশ্ন: টেকসই জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিতে স্কয়ার-এর মতো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কতোটা দায়বদ্ধ?
তপন চৌধুরী: আমরা যখনই কোনো শিল্প-কলকারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নিই, বিল্ডিং বা কারখানার ডিজাইনগুলো এমনভাবে করি যেন প্রকৃতির যতোটা কম সম্ভব ক্ষতি করে কাঠামোগুলো তৈরি হয়। এজন্যই দেখবেন, আমাদের চারপাশটা বেশ সবুজ। আমাদের স্থাপনা নির্মাণে জলাশয় কিংবা পাখিদের ক্ষতি করা হয়নি। প্রকৃতির সুরক্ষায় সবার মতো আমরাও দায়বদ্ধ, এবং সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা কাজ করে যাই।
প্রশ্ন: এবছর স্কয়ার–এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ। এ উপলক্ষে আপনারা কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন?
তপন চৌধুরী: অনেক উদ্যোগই গ্রহণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, আমরা তার সন্তানেরা ‘অনিতা-স্যামসন ট্রাস্ট’ গঠন করেছি। এই ট্রাস্টের আওতায় একটি মেডিকেল কলেজ, একটি নার্সিং কলেজ এবং একটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেন সব ধরনের মানুষ এর মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে আপনার ভাবনা যদি শেয়ার করতেন।
তপন চৌধুরী: আমার চিন্তার অনেকখানি জুড়েই আমার নাতিরা থাকে। তারাও তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরই অংশ। আমি যখন থাকবো না, আমি চাইবো তারা যেন বলার সুযোগ না পায়, যে আমার দাদুরা আমাদের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে যাননি। সেই সুন্দর পৃথিবী, সুন্দর দেশ গড়ে তোলার জন্যই কাজ করে গেছি এবং কাজ করে যাবো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: তপন চ ধ র স য মসন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘সিনেমায় প্রথম দিনের শুটিংয়ের জন্য তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে’
স্মৃতিচারণা, আলোচনা, সংগীত ও চলচ্চিত্রের নির্বাচিত দৃশ্যের প্রদর্শনী দিয়ে সাজানো মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটক ও তাঁর যমজ বোন প্রতীতি দত্তকে জন্মশতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হলো।
রোববার বিকেলে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনের রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি। অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩৯তম জন্মতিথি উপলক্ষে তাঁর প্রতিও বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’গানটি দিয়ে। এরপর স্মৃতিচারণা করেন ঋত্বিক কুমার ঘটকের বিখ্যাত চলচ্চিত্র তিতাস একটি নদীর নাম–এর প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ধ্রুপদি চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই। ১৯৬২ সালে সুবর্ণ–রেখা চলচ্চিত্রটি নির্মাণের দশ বছর পর তিতাসের কাজ শুরু করেছিলেন ঋত্বিক কুমার। প্রায় এক বছর ধরে কাজ হয়েছে। এই এক বছর তিনি ঋত্বিক কুমারের সঙ্গে কাটিয়েছেন। সবারই জানা কিছুটা খ্যাপাটে স্বভাবের ছিলেন ঋত্বিক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে বাদপ্রতিবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, লক্ষ্য ছিল, যা কিছু হোক ঋত্বিক কুমারকে দিয়ে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শেষ করানো। এসব করতে গিয়ে গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিল এই অনন্য প্রতিভাবান মানুষটির প্রতি। নির্মাণ শেষে ঋত্বিক বলেছিলেন, এই চলচ্চিত্রটি তিনি নির্মাণ করেছেন সময়ের চেয়ে ২০ বছর এগিয়ে।
তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র আবুল হায়াতই জীবিত আছেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এটি তাঁর জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র। ঋত্বিক কুমারের মতো নির্মাতার হাত ধরে এত বিখ্যাত একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারা তাঁর অভিনয়জীবনের একটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়। সিনেমায় প্রথম দিনের শুটিংয়ের জন্য টানা তিন দিন তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তখন ঢাকা ওয়াসাতে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। শুটিং হচ্ছিল মানিকগঞ্জে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে যেতেন আর সারা দিন অপেক্ষা করার পর পরিচালক তাঁকে পরের দিন আসতে বলতেন। অবশেষে তৃতীয় দিন রোজী সামাদের সঙ্গে তাঁর শুটিং হয়। তিনি বলেন, বাইরে থেকে ঋত্বিক কুমারকে দেখে যেমন মনে হতো, ভেতরের মানুষটি ছিল তার বিপরীত। খুব ঠান্ডা, নরম হৃদয়ের ছিলেন তিনি।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সবাই জানেন ঋত্বিক কুমার নিজের জীবনের প্রতি যত্নবান ছিলেন না। মাত্র পঞ্চাশ বছরের জীবন। আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন তিনি। বৈচিত্র্যময় প্রতিভাবান ছিলেন। নাটকে অভিনয় করেছেন। মৌলিক নাটক রচনা করেছেন পাঁচটি। গল্প লিখেছেন। তবে চলচ্চিত্রের জন্যই তিনি খ্যাত হয়েছেন। দেশভাগ তাঁর হৃদয়কে বিক্ষত করেছিল। দেশভাগ, সামাজিক অবক্ষয়, নারীর অবস্থান—এসব বারবার এসেছে তাঁর নাটক, গল্প ও চলচ্চিত্রে।
প্রাবন্ধিক মফিদুল হক তাঁর আলোচনার শুরুতে ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদান তুলে ধরেন। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদে প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। নতুন প্রজন্মকে তাঁর অবদান স্মরণ করতে হবে।
ঋত্বিক কুমার সম্পর্কে মফিদুল হক বলেন, ঋত্বিক কুমারের কথা বলতে সাধারণত উষ্কখুষ্ক চুল, মলিন বেশভূষার একটি মানুষের কথাই মনে আসে। তবে এটি তাঁর প্রকৃত চেহারা নয়। তাঁর বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর বড় ভাই বিখ্যাত সাহিত্যিক মণীশ ঘটক। মণীশের কন্যা মহাশ্বেতা দেবী। শৈশবে ঋত্বিক ও তাঁর যমজ বোন প্রতীতি কলকাতায় স্কুলে পড়েছেন। গাড়িতে করে যাতায়াত করেছেন। তবে তিনি জন্মস্থান রাজশাহীতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছিলেন। এখানেই তাঁর নাটকে অভিনয় ও সাহিত্যচর্চার শুরু। দেশভাগ ঋত্বিককে বদলে দিয়েছিল। জন্মস্থান ছেড়ে বাবার সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। যমজ বোন প্রতীতির বিয়ে হয় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পুত্রের সঙ্গে। দেশভাগের বেদনা ঋত্বিক তাঁর কাজে বিভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। রাজশাহীতে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে তিনি তাগিদ দেন।
আলোচনায় আরও অংশ নেন নারী নেত্রী সুলতানা কামাল, নির্মাতা শামীম আকতার, পারিবারিক বন্ধু মাহেরা খাতুন, কিশওয়ার কামাল, প্রতীতি দত্তের মেয়ে আরমা দত্ত।
অনুষ্ঠানে ঋত্বিক কুমারের বিভিন্ন চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দৃশ্য বড় পর্দায় প্রদর্শন করে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল। সংগীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা। সঞ্চালনা করেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির।