যশোরের অভয়নগরে নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদারকে (৫০) সালিশি বৈঠকে মাথায় গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের বাড়েদা গ্রামের পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

মাছের ঘের নিয়ে পিল্টু বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। ঘটনার পর পিল্টু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পলাতক। 

বিক্ষুব্ধ জনগণ তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তরিকুলের মরদেহ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

কৃষক দল নেতা তরিকুল হত্যার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তরিকুল নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ধোপাদী গ্রামের মৃত ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, ঘের-সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার উদ্দেশ্যে তরিকুলকে সন্ধ্যায় ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে সালিশ চলাকালে ঘেরের ইজারার চুক্তিনামা নিয়ে তর্ক বাধে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছয়-সাত দুর্বৃত্ত তরিকুল ইসলামকে প্রথমে কুপিয়ে, পরে গুলি করে হত্যা করে। পরে তারা স্থানীয় বাজারের কয়েকটি দোকানে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর পিল্টু বিশ্বাসের বাড়ির লোকজনও পালিয়ে যায়। অভয়নগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ৮টার দিকে মৃতদেহ উদ্ধার করে।

নিহত তরিকুলের ভাই বিএনপি নেতা জাকির হোসেন বলেন, সালিশি বৈঠকের জন্য তরিকুলকে ডহর মশিয়াহাটী এলাকায় ডেকে নেয়। সেখানে ইজারার চুক্তিনামা নিয়ে তর্কের এক পর্যায়ে তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানান, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অভয়নগর থানা পুলিশ, ডিবি টিম, স্থানীয় দুটি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলীম জানান, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মৎস্যঘের স্থাপনে নীতিমালা না মানায় বাড়ছে সংকট

যশোরের জলাবদ্ধ ভবদহ এলাকায় মাছের ঘের তৈরি শুরু হয় দুই দশক আগে। পানির সহজলভ্যতায় দেড় দশক আগে তা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। কিন্তু নদী ও খাল ভরাট হয়ে ঘেরের পানিনিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বর্ষায় ঘের এলাকা প্লাবিত হয়ে জীবনযাত্রা অচল হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ঘের স্থাপনে নীতিমালা তৈরি করে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু ঘেরমালিকেরা সেই নীতিমালা মানছেন না। অনেকে বিষয়টি জানেনও না। এতে ভবদহের জলাবদ্ধতার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভবদহ এলাকায় ১২ হাজার ৯৮৬ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ২৪০টি মাছের ঘের আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২ জন ঘেরের নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধনের আবেদন করেছেন মাত্র ২০ জন। বাকিরা এখনো নিবন্ধনের বাইরে।

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এখানে অন্তত ৫২টি ছোট-বড় বিল আছে। বিলের ভেতর দিয়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, হরি ও শ্রী নদ-নদী প্রবাহিত। এগুলোর জোয়ারভাটার সঙ্গে এলাকার বিলের পানি ওঠানামা করে। জলাবদ্ধতা নিরসন করে পরিকল্পিতভাবে মৎস্যঘের স্থাপন; সরকারি খাল, নদী ও জমি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে খাল ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৯ সালে মৎস্যঘের স্থাপন নীতিমালা প্রণয়ন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে মৎস্যঘের স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ভবদহ এলাকায় মৎস্যঘের স্থাপন নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মৎস্যঘেরের নিবন্ধন নেওয়া শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুনভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন ও খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার দাবি১৯ জানুয়ারি ২০২৫

নীতিমালায় বলা হয়, ঘের করতে হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। কেউ নীতিমালা ভঙ্গ করলে নিবন্ধন কর্মকর্তা তাঁর নিবন্ধন বাতিল করবেন। সরকারি খাল, সরকারি জমি, নদীর পাড় ও নদীর মধ্যে ঘের স্থাপন করা যাবে না। নদী, খাল ও খাসজমি ইজারা নিয়ে করা ঘেরের ইজারা বাতিল ও ঘের অপসারণ করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, প্রতিটি ঘেরের আয়তন হবে সর্বোচ্চ ১৫ হেক্টর, সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে ৫০ হেক্টর। ঘেরমালিক ঘেরের চারদিকে নিজ খরচে বাঁধ বা পাড় দেবেন, বাঁধের সঙ্গে সরকারি রাস্তা থাকলে বাঁধের উচ্চতা রাস্তার থেকে কম হবে। পানিনিষ্কাশনের সুবিধার্থে প্রত্যেক মালিককে ঘেরের বাঁধের বাইরে কমপক্ষে আড়াই ফুট করে জায়গা ছাড়তে হবে। উভয় ঘেরের পাড়ের মাঝে পানিনিষ্কাশনে অন্তত পাঁচ ফুট জায়গা থাকবে। সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধকে ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

আরও পড়ুনভবদহ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরেজমিনে বিল বোকড়, বিল খুকশিয়া, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল ডুমুর, বিল পায়রা, বিল ঝিকরা ও চাতরার বিল ঘুরে দেখা গেছে, যত দূর চোখ যায় শুধু মাছের ঘের। অধিকাংশ ঘের নীতিমালা মেনে করা হয়নি। ঘেরগুলোর আয়তন দশমিক ১৭ হেক্টর (১ বিঘা) থেকে শুরু করে ২০৪ হেক্টর পর্যন্ত। শুধু চাতরার বিলে সমবায় ভিত্তিতে ১০২ হেক্টরে ঘের করা হয়েছে, যা নীতিমালার ৫০ হেক্টরের দ্বিগুণের বেশি। দুই ঘেরের মাঝে আড়াই ফুট করে মোট পাঁচ ফুট জায়গা পানিনিষ্কাশনের জন্য ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও তেমন কোনো জায়গা নেই। পাশাপাশি দুই ঘেরের জন্য এক বাঁধ।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় শ্রী নদীর ওপর অবস্থিত ভবদহ স্লুইচগেট। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা, চার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
  • অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা
  • মৎস্যঘের স্থাপনে নীতিমালা না মানায় বাড়ছে সংকট