শেরপুরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ছয় সাংবাদিক আহত হয়েছেন। পরে সাংবাদিকরা নিউজ কাভার না করে ফিরে গেছেন। 

সোমবার (২৬ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নালিতাবাড়ী উপজেলার দাওধারা এলাকায় গারো পাহাড় এলাকায় এ হামলা হয়। হামলাকারীরা পাথর ও বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল। 

শেরপুরে বনের ভেতর পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুখোমুখি অবস্থানে স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগ। বনের ভেতর ২২৩ একর খাস জমি আছে। এর মধ্যে ৩২ একর জমি পাথরমহাল হিসেবে সংরক্ষিত আছে। সম্প্রতি বনের ভেতরে বিস্তীর্ণ এই জায়গাজুড়ে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয় নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। কাজ শুরুর পর বন্য হাতি সংরক্ষণ, সামাজিক বনায়ন বৃদ্ধি ও বনাঞ্চল টিকিয়ে রাখার সুপারিশে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনে আপত্তি জানায় স্থানীয় বন বিভাগ। এতে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে পর্যটনকেন্দ্রটি পরিদর্শনে এসেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জানান, বনের জায়গায় কোনো পর্যটন কেন্দ্র হবে না। এ সময় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে ও বিপক্ষের ব্যক্তিরা উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করেন। গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন স্থানীয়রা। 

আহত সাংবাদিকরা হলেন—এখন টিভির জাহিদুল খান সৌরভ, সময় টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট বাবু চক্রবর্তী, বাংলা টিভির নাঈম ইসলাম এবং বাংলাদেশের খবরের শাহরিয়ার শাকিরসহ আরো দুইজন।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববির সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন সাংবাদিকরা। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

তবে, এ বিষয়ে শেরপুরের পুলিশের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকায় কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

ঢাকা/তারিকুল/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ ড় বহর উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ