প্রাথমিকের শিক্ষকদের আন্দোলন: রাজশাহীতে কোথাও চলছে পাঠদান, কোথাও কর্মবিরতি
Published: 27th, May 2025 GMT
রাজশাহী নগরের বিনোদপুরে অবস্থিত মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা গেল, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছে। শিক্ষকেরা নিয়মিতভাবে ক্লাস নিচ্ছেন আর শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। বিদ্যালয়ের ১৪০ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই উপস্থিত ছিল।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা জেসমিন জানান, বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। কেউ কর্মবিরতিতে নেই। তাই পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে শিক্ষকেরা অফিসকক্ষে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে এলেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হচ্ছিল না। তাদের একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ লিখছে, কেউ গল্প করছে। প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে শ্রেণিকক্ষে উঁকি দিচ্ছেন।
সহকারী শিক্ষক মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমরা মে মাসের শুরু থেকে কর্মসূচি পালন করছি। প্রথমে এক ঘণ্টা, পরে দুই ঘণ্টা, এরপর অর্ধদিবস। এখন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে আছি। চাচ্ছি ১১তম গ্রেড। সরকার দিতে চায় ১২তম গ্রেড। ১১তম গ্রেডে একটি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে চায়, যেটা আমরা চাই না।’ তাঁর অভিযোগ, প্রাথমিক শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। অথচ এখানেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের।
তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা কর্মবিরতিতে। আজ মঙ্গলবার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।