চলতি বছর পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আগামী ৪ জুন। সৌদি আরবের পর্যবেক্ষণকেন্দ্রগুলো পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এ ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এ–সংক্রান্ত এক বিবৃতি দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সিতে প্রকাশ করা হয়।

গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের হজবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

পবিত্র হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম যেকোনো মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ।

প্রতিবছর জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতাগুলো সম্পন্ন করা হয়। এই সময়ের মধ্যে হজযাত্রীরা চার দিনের বিভিন্ন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। চার দিনের মধ্যে দ্বিতীয় দিন লাখ লাখ হাজি আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হন ও নামাজ আদায় করেন। এ পবিত্র ময়দানেই সেই পাহাড় অবস্থিত, যেখান থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন।

পবিত্র হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম যেকোনো মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ।

হজযাত্রীদের আরেক কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য পবিত্র মদিনা নগরী। সেখানে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র রওজা মোবারক। মদিনা সফর হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ না হলেও, প্রত্যেক মুসলমানের আত্মার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করার বিষয়টি।

সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ বছর আরাফাত ময়দানের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হবে ৫ জুন। আর দেশটিতে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে পরদিন, ৬ জুন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রায় ১৮ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ওই বছর হজ পালনকালে সৌদি আরবে তাপমাত্রা বেড়ে ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। গরমের কারণে ও অন্যান্য অসুস্থতায় ওই বছর ১ হাজার ৩০০-এর বেশি হজযাত্রী মারা যান।

আরও পড়ুনসৌদি আরবে ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা১৫ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজয ত র ম সলম ন আরব র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রিয় মদিনা, মসজিদে নববি এবং অন্যান্য

মক্কা থেকে ২৯০ মাইল উত্তরে মদিনা। শহরটি লোহিত সাগরের পাড় থেকে ৯০ মাইল পূর্বে। ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম শহর মদিনা। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত শহর এটি। মদিনা প্রদেশের রাজধানী মদিনা আল মুনাওয়ারাহ, যার অর্থ আলোকিত শহর। 

মদিনায় ৬২২ সালে মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে নববি নির্মাণকাজ শুরু করেন। নবীজি (সা.) চেয়েছিলেন এমন একটি মসজিদ বানাতে, যার সংলগ্ন জায়গায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতে পারবেন। স্থানীয় সব গোত্রই তখন জমি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে লাগল। কিন্তু তিনি কাউকে মনঃক্ষুণ্ন করতে চাইলেন না।
মুহাম্মদ (সা.) বললেন, তিনি যে উটের পিঠে চড়ে আসবেন, সেই উটটি যেখানে থামবে, সেখানেই হবে মসজিদ। দেখা গেল, উট যেখানে বসল, সেটি দুইজন এতিমের জায়গা। তখন নবী (সা.) আবু বকর (রা.)-কে বললেন, তাদের জমির মূল্য পরিশোধ করে দিতে। এরপর তিনি মসজিদের নকশা করেন এবং অন্য মুসলিমদের সহায়তা নিয়ে তা বানানো শুরু করলেন। মসজিদটি 
বানাতে যতদিন লেগেছিল, ততদিন তিনি সাহাবি আবু আইয়ুব আল-আনসারি (রা.)-এর বাড়িতে ছিলেন।
পবিত্র কোরআনের প্রায় অর্ধেক মদিনায় নাজিল হয়েছে। মদিনা আরও কয়েকটি নামে পরিচিত– ইয়াসরিব, তায়বা, আল-আজরা, আল-মুবারাকাহ, আল-মুখতারাহ ইত্যাদি। 

মসজিদে নববি-সম্পর্কিত তথ্য
পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা দরজা ও নামাজের জায়গা রয়েছে। মসজিদে প্রবেশের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তাকর্মী থাকেন। তারা কারও সঙ্গে বড় আকারের ব্যাগ থাকলে তা চেক করে থাকেন। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে ২২৯টি দরজা, ১৯৬টি স্থির ও চলমান গম্বুজ ও ১০টি মিনার রয়েছে। মসজিদের প্রতিটি বড় প্রবেশ দরজার ফটকে নামাজের সময়সূচি টাঙানো আছে।
মসজিদের চত্বরের চারপাশে ২৬২টি সানশেড বৈদ্যুতিক ছাতা রয়েছে। এসব ছাতা দিনের বেলায় খোলা থাকে এবং রাতে বন্ধ থাকে। মসজিদের ভেতরে সব জায়গায় জমজম কূপের পানির কনটেইনার পাওয়া যায়। মসজিদের ভেতরে জুতা-স্যান্ডেল রাখার জন্য অসংখ্য শেলফ রয়েছে। পর্যাপ্ত চেয়ার, বুকশেলফ ও রেহাল আছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মসজিদের ভেতরে কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিক। মসজিদের মধ্যে অনেক তাক রয়েছে। সেখান থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে পড়তে পারেন।
ঋতুভেদে এখানে সময় কিছুটা পরিবর্তন হয়। মসজিদে নববির চারপাশে কিছু মিউজিয়াম ও এক্সিবিশন হল আছে। এগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। কবরস্থান ফজরের নামাজের পরে, বিকেলে আসরের নামাজের পরে জিয়ারতের জন্য খোলা থাকে।

মদিনার ঐতিহাসিক স্থান
মদিনার ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায়। ফজর নামাজের পর বের হলে সবকিছু ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। মসজিদে নববির সামনে ও শহরের অন্যান্য রাস্তায় চালকেরা ‘জিয়ারা, জিয়ারা’ বলে যাত্রীদের ডাকাডাকি করেন। জিয়ারা মানে ভ্রমণ।
কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। এই জিয়ারা প্যাকেজে ওহুদ পাহাড়, মসজিদে কুবা ও মসজিদে কিবলাতাঈন ঘুরে দেখা যায়। এতে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ রিয়াল খরচ পড়ে। অবশ্য এই প্যাকেজে খন্দক নেই। খন্দক আলাদাভাবে যেতে হয়। 

মসজিদে কিবলাতাঈন
কিবলাতাঈন শব্দের অর্থ হলো দুটি কিবলা। মসজিদে কিবলাতাঈন হলো দুই কিবলার মসজিদ। রাসুল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে এখানে নামাজ আদায়ের সময় কিবলা পরিবর্তনের ওহি নাজিল হয়। ওহি পাওয়ার পর নামাজের মধ্যে আল-আকসা থেকে মুখ ঘুরিয়ে কাবামুখী হয়ে নামাজ আদায় করেন তিনি। এ জন্য এই মসজিদের নাম কিবলাতাঈন। ভেতরে মূল অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদটি বাড়ানো হয়েছে।

ওহুদ পাহাড়
ওহুদ পাহাড় মদিনার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। পাথরের এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩৫০ মিটার। পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড়টির প্রস্থ ১০০ থেকে ৩০০ মিটার। ওহুদ শব্দের অর্থ এক বা একক। এটি অন্যান্য পাহাড় থেকে স্বতন্ত্র ও একক বলে ওহুদ নামকরণ করা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় যুদ্ধ হয় এই পাহাড় ঘিরে। দুই মাথাওয়ালা একটি পাহাড়, মাঝখানে কিছুটা নিচু। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে ওহুদ যুদ্ধ হয়। পাহাড়টি মূল্যবান পাথরে সমৃদ্ধ। পাহাড়ের পূর্বে বিমানবন্দর রোড ও পশ্চিমে আল-উজুন গ্রাম।

মসজিদে গামামাহ
গামামাহ শব্দের অর্থ বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে নামাজ আদায় করেছেন। তাই মসজিদটির নাম রাখা হয় গামামাহ মসজিদ। রাসুল (সা.) এখানে প্রথম ঈদের নামাজ আদায় করেন। একে ঈদগাহের মসজিদও বলে।

খন্দক
আরব ও ইহুদি গোত্রগুলো একবার সম্মিলিতভাবে মদিনা অবরোধ করেছিল। একে আজহাবের যুদ্ধও বলা হয়। তবে এটি খন্দকের যুদ্ধ নামে বেশি পরিচিত। খন্দক অর্থ পরিখা। পরিখা খননের মাধ্যমে শত্রুপক্ষকে কাবু করার নতুন রণকৌশল ব্যবহার হয়েছিল এই যুদ্ধে।
মুসলমানরা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধের ময়দানে দীর্ঘ পরিখা খনন করেন। হজরত সালমান 
ফারসি (রা.)-এর পরামর্শে মদিনার সব প্রবেশপথে পরিখা খনন করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন মুসলমানরা।

বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
মদিনা শহরে তাবুক সড়কে বাদশাহ ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স। হজ শেষে হাজিরা বিমানবন্দর ও হজ টার্মিনাল দিয়ে দেশে ফেরার সময় তাদের হাতে উপহার হিসেবে পবিত্র কোরআন দেওয়া হয়। এখান থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ কপি কোরআন শরিফ ছাপা হয়। 
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় পবিত্র কোরআনের অর্থ ও তাফসির মুদ্রণ, ভিডিও, সিডি, ক্যাসেট আকারে প্রকাশ করা হয় এখান থেকে। রয়েছে কোরআন গবেষণাকেন্দ্র, পাঠাগার। এখানে পবিত্র কোরআন বিনামূল্যে বিলি করা হয়।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারকে সালাম
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-এর কক্ষেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত হয় এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। মসজিদ সম্প্রসারণ করার পর বর্তমানে তাঁর কবর মোবারক মসজিদে নববির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। 
রাসুলে করিম (সা.)-এর রওজা মোবারকের পাশে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর কবর রয়েছে। 
হজরত আবু বকর (রা.)-এর রওজার কাছে দাঁড়িয়ে পাঠ করুন: আসসালামু আলাইকা ইয়া খলিফাতা রাসুলিল্লাহি আবু বকর (রা.)। 
এবার ডান দিকে সরে গিয়ে হজরত ওমর (রা.)-এর রওজা মোবারক বরাবর দাঁড়িয়ে পাঠ করুন: আসসালামু আলাইকা ইয়া আমিরাল মুমিনিন ওমর ফারুক (রা.)।
তারপর সালাম পাঠ করুন
এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান ও মর্যাদার কথা স্মরণ করে সালাম পেশ করতে হয়। এভাবে সালাম পাঠ করতে পারেন—
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবি ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। 
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ।
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া নাবিয়াল্লাহ।
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া শাফিয়াল মুজনিবিন।
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ। 
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া খায়রা খালকিল্লাহ।
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া সায়্যিদাল মুরসালিন।
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া খাতামান নাবিয়্যিন।
আসসালাতু ওয়াসসালামু আলাইকা ইয়া রাহমাতাল্লিল আলামিন।

 

দোয়া কবুলের স্থান

বায়তুল্লাহয় যখন নজর পড়ে
মাকামে ইবরাহিম
হাজরে আসওয়াদ
মাতাফ, মুলতাজাম
জমজম কূপ, সাফা ও মারওয়া
হাতিমের মধ্যে, মিনা, মসজিদে খায়েফ
কঙ্কর নিক্ষেপের স্থানে
মসজিদে নামিরাহ
আরাফাতে, মুজদালিফায়
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ