গলায় রশি ঝোলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি: সংবর্ধনায় এ টি এম আজহার
Published: 28th, May 2025 GMT
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে সংবর্ধনা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। পরে জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহার বলেছেন, ‘আজ আল্লাহর রহমতে আমিরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি। গলায় রশি ঝুলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি। আজীবন যেন আমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য শহীদ হতে পারি, সেই তৌফিক আল্লাহর কাছে চাই।’
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এ টিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রায় দেন সুপি৶ম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে শাহবাগ মোড়ে অস্থায়ীভাবে নির্মিত মঞ্চে তাঁর জন্য সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনার আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী।
সংবর্ধনায় এ টি এম আজহারুল বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজ সকালে মুক্ত হলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশে আমি একজন স্বাধীন নাগরিক।’ এর জন্য তিনি প্রথমে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এরপর আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায় বিচার ছিলো না, আদালতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।’
নিজের মামলায় নিয়োগকৃত আইনজীবীদেরও ধন্যবাদ জানান আজহারুল। তিনি বলেন, ‘আরও ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাঁদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেই ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদের। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাব এক্ষেত্রে ছাত্রসমাজকে, যাঁরা তাঁদের অতীতের গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।’ সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলীকে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ করা হয়েছে বলে দাবি করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যারাই এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেখানে যে পর্যায়ে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হোক। তা না হলে এই খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
সংবর্ধনার এই আয়োজনে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত এই ভাইয়ের (আজহারুল) বক্তব্য অচিরেই আমরা আরও বড় পরিসরে শুনব, ইনশাল্লাহ। এই ঢাকাতেই শুনব, ইনশাআল্লাহ। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে মানুষটাকে সুদীর্ঘ ১৪টি বছর ঘাড়ের ওপর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে জুলুম করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। মহান রব তাঁকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।’
জামায়াত আমির আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি মজলুম মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জালিম সরকারের পতন হয়েছে। আমরা এর মূল কৃতিত্ব আল্লাহ তাআলাকে দিই আর জমিনে এই কৃতিত্ব এ দেশের জনগণকে দেওয়ার পক্ষে। জাতির প্রয়োজনে আমরা একপথে হাঁটবো এবং সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।
এ টি এম আজহারুল ইসলামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীরা। ২৮ মে, শাহবাগ, ঢাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
দিল্লির কথায় রাজপথ দখলের চেষ্টা করলে ১৮ কোটি জনতা ঠেকিয়ে দেবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) কাজ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেছেন, দিল্লির কথায় বাংলাদেশে কোনো দল যদি রাজপথ দখলের চেষ্টা করে, তাহলে ১৮ কোটি জনতা তাদের ঠেকিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা বলেন। এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ভারতীয় একজন বক্তব্য দিয়েছেন, ডিসেম্বরে নাকি বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে। বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। সে বিষয়ে দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশে কাজ করবে না। আর দিল্লির কথায় বাংলাদেশে কোনো দল যদি রাজপথ দখলের চেষ্টা করে, দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে যদি কোনো দল বা ব্যক্তি বাংলাদেশে কাজ শুরু করে, তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতা যেভাবে ৫ আগস্টে নেমে এসেছিল, (সেভাবে) তারা ভবিষ্যতে রাজপথে নেমে এসে দিল্লি এবং দিল্লির প্রেসক্রিপশনে যারা কাজ করছে, তাদের ঠেকিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবে।’
কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অফিসকে দলীয় অফিসে পরিণত করে সেখান থেকে তারা চট্টগ্রামের মেয়র নিল এবং ঢাকাতেও তারা এ ধরনের একটি গেজেট প্রকাশ করল। আমরা তাদের কাছে আহ্বান জানাব, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের কাঠামোগত জায়গায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলো নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন তাদের লিটমাস টেস্ট বা পরীক্ষায় ফেল করেছে। তারা যে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়েছে, সেটা আমরা ইশরাক হোসেনের গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে দেখলাম।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘তারা আইন-আদালতে গিয়ে জবরদস্তি করে আমাদের বিচারালয়কে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তা–ও বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে। আমরা গণ-অভ্যুত্থানের পরে কোনো বিভেদ চাই না। কিন্তু কেউ যদি গুন্ডামি-মাস্তানি করে, সন্ত্রাস করে, নগর ভবন দখল করে রাখে, নির্বাচন অফিসকে দলীয় অফিসে পরিণত করে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন দখল করে রাখে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দখল করে রাখে, এসব গুন্ডামি আর বাংলাদেশে চলবে না৷ যদি গুন্ডামি করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে করুন।’
অনুষ্ঠানে এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের কমিটি ঘোষণা করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এই কমিটিতে শেখ মোহাম্মদ শাহ মঈনকে সমন্বয়ক করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল আমিন ছাড়াও প্রকৌশল উইংয়ের নেতারা বক্তব্য দেন।