নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনকে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে কাজ করতে হবে। স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করলে টাকার খেলায় দুরূহ সমস্যা তৈরি হয়। ব্যবসা রাজনীতিতে আর রাজনীতি ব্যবসায় পরিণত হলে দেশ-জাতি এগোবে না। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজ (সিপিএস) ও ইউনিভার্সিটি স্টাডি ফোরাম (ইউএসএফ) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। 

‘দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনে জাতীয় ঐকমত্য’ শীর্ষক এই আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনীতি যখন ব্যবসার মাধ্যমে প্রভাবিত হয় এবং ব্যবসা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন দেশ ও জাতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী না হওয়ায় টাকার দাপটে রাজনৈতিক অঙ্গন দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে, যা জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল আমিন ব্যাপারী, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক  ফজলে ইলাহি, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো.

সফি উল্লাহ, রাওয়া ক্লাবের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) আব্দুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক গবেষণা পরিচালক কর্নেল (অব.) জেড আর এম আশরাফ উদ্দিন, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মিরাজ মিয়া এবং সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. তালহা।

আলোচকরা বলেন, সচিবালয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে এখনও কেন ফ্যাসিবাদমুক্ত করা যায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। গুম, খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি।

তারা আরও বলেন, রাজনীতিতে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংবিধানে এমন সংস্কার আনতে হবে, যাতে একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন এবং স্বজনপ্রীতির সুযোগ বন্ধ হয়। নির্বাচনী বিধিমালা সংস্কার করে অকার্যকর রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল এবং নতুন আঞ্চলিক রাজনৈতিক শক্তিকে সুযোগ দেওয়ার কথাও আলোচনায় উঠে আসে।

সবশেষে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে, যেন স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত হয়।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ব যবস র জন ত ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ