দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি চাপের মুখে রয়েছে বলে মনে করছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরগতিতে পুনরুদ্ধারের পথে এগোচ্ছে বলেও মনে করছে সংগঠনটি।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) নিয়ে গতকাল বুধবার এমসিসিআই প্রকাশিত পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এমন মত তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতির গতিশীলতাও পুনরুদ্ধার হচ্ছে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। তবে কৃষিঋণ প্রায় ৭ শতাংশ কমে গেছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংকিং খাতের বিপুল অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারিকে অর্থনীতির অগ্রগতির পথে বড় বাধাও হিসেবে তুলে ধরেছে এমসিসিআই। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সময়ে ব্যাংক খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মারাত্মক দুর্বলতা এবং বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বিলম্বিত হয়েছে। তবে এমসিসিআই আশা করছে, ব্যাংকিং খাত সংস্কার এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জিডিপি প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদনে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত ও অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলতে পারে। এখনো বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। দেশে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। রপ্তানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পে এখন কিছুটা স্থিতিশীলতা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, গত মার্চ ও এপ্রিলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবাসী আয়ও আশাব্যঞ্জক হারে বেড়েছে, যা ডলারের সরবরাহে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে আমদানির পরিমাণও। গত মার্চে আমদানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রবাহ ২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণ প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি নিয়ে বলা হয়, টানা তিন মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতার পর এ বছরের মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে এমসিসিআই বলছে, তৃতীয় প্রান্তিকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে মোট খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৩ লাখ মেট্রিক টনে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি।

এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদনে সার্বিকভাবে বলা হয়েছে, অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও সেটি দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই করতে হলে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব দ ধ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা  সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। 

সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।

এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার