তথ্য গোপন করায় নিয়োগ বাতিল হওয়া স্বাস্থ্য সহকারীকে পুনর্বহাল করলেন সিভিল সার্জন
Published: 29th, May 2025 GMT
তথ্য গোপন করে নিয়োগ পাওয়া এক স্বাস্থ্য সহকারীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল এক বছর আগে। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন কাউছার সোলতানা নামের ওই নারী। মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইন শাখার আপত্তি সত্ত্বেও তাঁকে পুনরায় নিয়োগ দেন চট্টগ্রামের বর্তমান সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম।
এই পুনর্নিয়োগকে ‘বিধিবহির্ভূত’ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযোগ রয়েছে, চার সদস্যের নিয়োগ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একক সিদ্ধান্তে কাউছারকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ার্ড স্বাস্থ্য সহকারী পদের জন্য আবেদন করেন কাউছার সোলতানা। ২০২৪ সালের ২৩ মে তাঁকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। পরে ২৮ মে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি যোগ দেন। কিন্তু তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) কাঞ্চনা ইউনিয়নের ঠিকানা থাকলেও তিনি আবেদনে সাতকানিয়া ইউনিয়নের ঠিকানা দেন। এই তথ্য গোপনের অভিযোগে ৩ জুন তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কাঞ্চনা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঞ্চনা ওয়ার্ডে কোনো পদ খালি ছিল না। চাকরি পেতে কাউছার নিজেকে সাতকানিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা দাবি করে আবেদন করেন, যেখানে পদটি খালি ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউছার সোলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভুল করে সাতকানিয়া ইউনিয়নের ঠিকানা দিয়েছিলাম। এটা ভুল হয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু একটা মানবিক দিক তো আছে। পরে নতুন করে নিয়োগপত্র পাওয়ার পর হাইকোর্টের রিট প্রত্যাহার করেছি।’
নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করা গুরুতর অপরাধ। যেকোনো সময় এর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পূর্ববর্তী সিভিল সার্জন বিধি অনুযায়ী নিয়োগ বাতিল করেছিলেন। বর্তমান সিভিল সার্জনের নিয়োগের বিষয়ে কিছু জানি না, তবে এটি বিধিসম্মত হয়নি বলেই মনে করি।পরিমল কুমার পাল, উপপরিচালক (আইন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরতাঁর নিয়োগ বাতিলের আদেশে সই করেন তৎকালীন সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। পদাধিকার বলে তিনি নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অংসুই প্রু মারমা। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন, সরকারি কর্ম কমিশন এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে এই নিয়োগ কমিটি গঠিত হয়।
ওই কমিটি চট্টগ্রামের ২৭৬ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ২৪৭ জন নিয়োগ দিয়েছিল। বাকি পদের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া যায়নি। নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে কাউছার সোলতানাও ছিলেন। পরে তথ্য গোপনের কারণে তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হয়।
জানতে চাইলে তৎকালীন সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য সহকারীর নিয়োগে শর্ত রয়েছে, প্রার্থীকে সেই ওয়ার্ড বা ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে হবে। কাউছারের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি বলেই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল।’
বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে উপপরিচালক পদে আছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাহাঙ্গীর আলম।
নিয়োগ বাতিল হওয়ার পর চাকরি ফিরে পেতে কাউছার সোলতানা হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর ৩ মার্চ সিভিল সার্জন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রার্থী ঠিকানার বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তবে যেহেতু রিট বিচারাধীন, তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইন শাখার মতামত নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে ২৪ মার্চ সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম একটি অফিস আদেশে কাউছার সোলতানার নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন এবং তাঁকে শর্ত সাপেক্ষে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আওতায় বলা হয়, নতুন যোগদানের তারিখ থেকে তাঁর চাকরির মেয়াদ ধরা হবে এবং নিজের খরচে রিট প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি ২৭ মার্চ আবার সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি, ইউএইচএফপিও (উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা), আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন দেখা যাক কী হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইন শাখা বিষয়টি নিয়ে ১৫ এপ্রিল সিভিল সার্জনের কাছে চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়, ভুল তথ্য দেওয়ায় কাউছারের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল এবং সেটি বিধিসম্মত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (আইন) পরিমল কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করা গুরুতর অপরাধ। যেকোনো সময় এর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পূর্ববর্তী সিভিল সার্জন বিধি অনুযায়ী নিয়োগ বাতিল করেছিলেন। বর্তমান সিভিল সার্জনের নিয়োগের বিষয়ে কিছু জানি না, তবে এটি বিধিসম্মত হয়নি বলেই মনে করি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য সহক র ন জ হ ঙ গ র আলম ন স ভ ল স র জন ন য় গ ব ত ল কর র জন য র চ লক
এছাড়াও পড়ুন:
দুই মাস ধরে নিখোঁজ গৃহবধূ, হত্যা-গুমের শঙ্কা পরিবারের
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রিনা পারভীন নামে এক গৃহবধূ দুই মাস ধরে নিখোঁজ থাকার অভিযোগ উঠেছে। রিনা অপহরণ, গুম বা হত্যার শিকার হতে পারেন– এ আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ জানিয়েছেন গৃহবধূর স্বজনরা।
নিখোঁজ রিনা পারভীন (৩৭) কালীগঞ্জ পৌর এলাকার চাপালীখানা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী। এই দম্পত্তির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
রিনা পারভীনের স্বামী সাজ্জাদ হোসেনের ভাষ্য, গত ১১ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর সারাদিন পেরিয়ে গেলেও বাড়িতে ফিরে না আসায় সন্ধ্যার পর তিনি স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পান। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তাঁর সন্ধান না মেলায় ওই রাতেই তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ট্র্যাকিং করে ১৩ এপ্রিল পাবনা ও ২৩ এপ্রিল পিরোজপুরে কিছু সময়ের জন্য ফোন খোলা পেয়েছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা থানার উপপরিদর্শক রানা প্রতাপের অসহযোগিতার কারণে তাঁর স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া বা তাঁকে উদ্ধার করা যায়নি।
সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, তাঁর স্ত্রী ১১ এপ্রিল বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। গত ১২ মে ডাকে তাঁর কাছে একটি তালাকনামা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার ১ নম্বর চিলশিয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন খান স্বাক্ষরিত ওই তালাকনামায় তারিখ উল্লেখ আছে ১ এপ্রিলের। তালাকনামার সত্যতা জানতে তিনি ওই রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ ছাড়া তালাকনামায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের দু’জন সাক্ষীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো হদিস পাননি। তালাকের ঘটনাটি প্রতারক চক্রের সাজানো নাটক হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, রিনা কোনো সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বা অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়তে পারেন। কারণ তাঁর স্ত্রীর কাছে সাত ভরির মতো স্বর্ণালংকার ও লক্ষাধিক টাকা ছিল। এসব হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই কোনো চক্র তাঁকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে গুম করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
এ ঘটনায় তাদের পরিবার তছনছ হয়ে গেছে বলে জানায় সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে ছোয়াদ ইসলাম। সে বলে, নিখোঁজের প্রায় ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও তার মাকে উদ্ধারে পুলিশ কোনো জোরালো ভূমিকা রাখেনি। মায়ের বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কায় তাদের দিন কাটছে।
রিনা পারভীনের মা জাহানারা বেগম জানান, তাঁর মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় পরিবারের মধ্যে ভয় ও শঙ্কা বিরাজ করছে। নাতি-নাতনির মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না। মেয়ের সন্ধান ও উদ্ধারে পুলিশের শক্ত ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
তালাকনামা পাঠানোর সত্যতা জানতে নিকাহ রেজিস্ট্রার নুরুল আমিন খানের মোবাইল ফোনে গতকাল বুধবার ও মঙ্গলবার একাধিকবার কল দেওয়া হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রানা প্রতাপ জানান, তিনি প্রথম দিকে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে রিনা পারভীনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছেন। দু’সপ্তাহ আগে ওই নারী স্বামীর কাছে একটি তালাকনামা পাঠিয়েছেন বলে শুনেছেন। তবে তিনি তালাকনামাটি যাচাই-বাছাই করেননি।
ও বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, গৃহবধূর নিখোঁজের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার অসহযোগিতার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।