দেশ মহা দুর্যোগকাল পার করছে: জি এম কাদের
Published: 29th, May 2025 GMT
দেশ মহা দুর্যোগকাল পার করছে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, ‘সামনের দিকে মহা বিপদের আশঙ্কা। দেশ ভালো চলছে না। সবকিছু অচল হয়ে পড়ছে, ভেঙে পড়ছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে চার দিনের সফরে রংপুরের সেনপাড়ার নিজ বাড়িতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাপা চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা যেটা লক্ষ করছি, প্রধান উপদেষ্টা ও ওনার সঙ্গে যাঁরা তরুণ, তাঁদের উনি ওনার নিয়োগকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলেন। তাঁরা মিলে দেশকে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত করেছেন। এই বিভক্তি দিনকে দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং একজনের ওপর আরেকজনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সামনের দিকে বড় ধরনের একটি সংঘাত পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি সাউথ আফ্রিকার সাদা ও কালোর বর্ণবাদী আচরণের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মনে হচ্ছে, ওরা (সরকার) দেশকে দুভাগ করেছেন। ওনাদের মাপকাঠিতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বলে তাঁরা কিছু লোককে চিহ্নিত করেছেন। আর বাকিগুলো ফ্যাসিবাদ বা ফ্যাসিবাদের দোসর এভাবে বলে তাঁরা সারা দেশের অধিকাংশ মানুষকে লেবেল করেছেন। সাউথ আফ্রিকার ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটের মতো আইনের প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে।’
দেশের বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক অধিকারকে বঞ্চিত করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের কালাকানুন প্রবর্তন করছে। বিভিন্নভাবে মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে তাদের দ্বারা। সম্পূর্ণভাবে তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বের করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘সব ধরনের আন্দোলনে আমরা সর্বাত্মকভাবে ছিলাম। ছাত্রদের এই আন্দোলনে আমরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছিলাম। বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাইনি। তারপরও কোনো সময় বাধ্য করা হয়েছে, কোনো সময় পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলোর বৈধতা দিইনি।’
জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের মিছিল করতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়। কাউন্সিল করতে যাব সেখানে হল ভাড়া নিতে পারি না। অযথা মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটক করা হচ্ছে এবং বিচার ছাড়াই তাদের মাসের পর কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার নিজস্ব দল গঠন করছে বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তবে সেই দলের নাম প্রকাশ করেননি তিনি। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে দেশ আরও সংকটে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এ সময় জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
একটি দল ছাড়া কোনো দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না, তা সঠিক নয়: গণফোরাম
গণফোরাম বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফরে গিয়ে একটি দল ছাড়া আর কোনো দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা সঠিক নয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে বলেও উল্লেখ করেছে দলটি।
আজ শুক্রবার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। গণফোরামের সভাপতি পরিষদের অন্যতম সদস্য এস এম আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান, সভাপতি পরিষদের সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মেজবাহউদ্দীন, মোশতাক আহমেদ, সুরাইয়া বেগম, সেলিম আকবর, শাহ নুরুজ্জামান প্রমুখ।
সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে গণফোরামের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টার বক্তব্য অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং এর ফলে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
গণফোরামের নেতারা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সুফল পাওয়ার জন্য দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে দুঃখজনক।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের বৈঠক জাতিকে আরও হতাশ করেছে বলে উল্লেখ করেছে গণফোরাম। দলটি বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এবারের বৈঠকে গণফোরামকে আমন্ত্রণ না জানানোর ফলে সরকার ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
গণফোরামের নেতারা আরও বলেন, গত ৯ মাসে সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও জনপ্রশাসনের অস্থিরতা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বা দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা এখনো লক্ষ করা যায়নি। ফলে সরকারের প্রতি জনসমর্থন যেমন হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ও জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে।
গণফোরাম সভাপতি পরিষদের সভায় অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, সে ঐক্য যেন কোনো অশুভ শক্তি বিনষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।