দেশ মহা দুর্যোগকাল পার করছে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, ‘সামনের দিকে মহা বিপদের আশঙ্কা। দেশ ভালো চলছে না। সবকিছু অচল হয়ে পড়ছে, ভেঙে পড়ছে।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে চার দিনের সফরে রংপুরের সেনপাড়ার নিজ বাড়িতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাপা চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা যেটা লক্ষ করছি, প্রধান উপদেষ্টা ও ওনার সঙ্গে যাঁরা তরুণ, তাঁদের উনি ওনার নিয়োগকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলেন। তাঁরা মিলে দেশকে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত করেছেন। এই বিভক্তি দিনকে দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং একজনের ওপর আরেকজনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সামনের দিকে বড় ধরনের একটি সংঘাত পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি সাউথ আফ্রিকার সাদা ও কালোর বর্ণবাদী আচরণের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মনে হচ্ছে, ওরা (সরকার) দেশকে দুভাগ করেছেন। ওনাদের মাপকাঠিতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বলে তাঁরা কিছু লোককে চিহ্নিত করেছেন। আর বাকিগুলো ফ্যাসিবাদ বা ফ্যাসিবাদের দোসর এভাবে বলে তাঁরা সারা দেশের অধিকাংশ মানুষকে লেবেল করেছেন। সাউথ আফ্রিকার ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটের মতো আইনের প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে।’

দেশের বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক অধিকারকে বঞ্চিত করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের কালাকানুন প্রবর্তন করছে। বিভিন্নভাবে মানুষ অত্যাচারিত হচ্ছে তাদের দ্বারা। সম্পূর্ণভাবে তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার থেকে বের করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।’

জি এম কাদের বলেন, ‘সব ধরনের আন্দোলনে আমরা সর্বাত্মকভাবে ছিলাম। ছাত্রদের এই আন্দোলনে আমরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছিলাম। বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাইনি। তারপরও কোনো সময় বাধ্য করা হয়েছে, কোনো সময় পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলোর বৈধতা দিইনি।’

জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের মিছিল করতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়। কাউন্সিল করতে যাব সেখানে হল ভাড়া নিতে পারি না। অযথা মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটক করা হচ্ছে এবং বিচার ছাড়াই তাদের মাসের পর কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার নিজস্ব দল গঠন করছে বলে অভিযোগ করেন জি এম কাদের। তবে সেই দলের নাম প্রকাশ করেননি তিনি। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হলে দেশ আরও সংকটে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এ সময় জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন, হুশিয়ারী

বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে  মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থী,  শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সমাবেশ শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।

বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এই কর্মসুচিতে সিদ্ধিরগঞ্জের দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি  বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের হাতে " প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এ বৈষম্য কেন? শিক্ষা উপদেষ্টা জবাব চাই" সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড শোভা পায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বিল্লাল হোসেন রবিন, ঢাকা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি জি এইচ ফারুক, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো: সামসুজ্জামান, প্রধান সমন্বয়ক মো: সাইফুল ইসলাম রুবেল, মহাসচিব মো: সাখাওয়াত হোসেন খান, সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন ঢালী, শিক্ষক কাওসার আহমেদ, এসএম বিজয়, আল মামুন , তরিকুল ইসলাম, বাহাউদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন ও এমপিও-বহির্ভূত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ও হতাশ হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, “আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। অথচ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কোমলমতি শিশুদের বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।”

তারা বলেন, দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাদের একটি বড় অংশ দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আশায় এগিয়ে এসেছে। এখন এই সিদ্ধান্ত তাদের স্বপ্ন ও শ্রমের প্রতি অবিচার।

বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে এই প্রজ্ঞাপন সেই প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। তারা প্রশ্ন তোলেন, “ই আই আই এন নম্বরধারী নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যদি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়, তবে কেন নিবন্ধিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না?”

বক্তারা আরও বলেন ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোরা হবে।

মানববন্ধন ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, ১নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি নেজাম উদ্দিন শাহীন, ২নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি জাকির উল্লাহ সুজুন, ৩নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: আজহারুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: শামীম, ৬নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: জাবের হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড  প্রতিনিধি মো: আল আমিন, ১০ নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি এড: মো: খোরশেদ আলম প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ