সীমান্তে বাতি নিভিয়ে ৬৫ জনকে ফেরত নিল বিএসএফ
Published: 29th, May 2025 GMT
লালমনিরহাটের তিন উপজেলার ছয় সীমান্ত দিয়ে অন্তত ৬৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বুধবার এ নিয়ে দিনভর নানা নাটকীয়তা ও উত্তেজনার পর রাত ৯টার দিকে সীমান্তের সব বাতি নিভিয়ে ৬৫ জন ভারতীয় নাগরিককে নোম্যান্স ল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে বিএসএফ। এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে একসঙ্গে এসব মানুষকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের দিকে ঠেলে দেয় তারা। কিন্তু বিজিবি ও স্থানীয় গ্রামবাসীর বাধায় ৬৫ জনের কেউ বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনি।
ওই দিন প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ৬৫ নারী-পুরুষ-শিশু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে খোলা জায়গায় অবস্থান করছিল। এর মধ্যে আদিতমারী উপজেলার চওড়াটারি সীমান্তে ঠেলে দেওয়া ১৩ জনের দলে মরিয়ম নামে আট মাস বয়সী একটি শিশুও ছিল। স্থানীয়রা তাদের দুধ, কলা ও পানি দিয়ে সহায়তা করে। সীমান্তের লোকজন জানায়, আটকে পড়া ওই ৬৫ জন ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা।
জানা গেছে, আদিতমারী সীমান্তে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে নিতে বুধবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে দুই দফা পতাকা বৈঠক হয়। প্রথমে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে ও পরে হয় ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে বৈঠক। কিন্তু কোনো বৈঠকেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি বিএসএফ। বৈঠকে বিজিবি সাফ জানিয়ে দেয়, আটকে পড়া এসব মানুষ আসাম রাজ্যের বাসিন্দা। বাংলাদেশ তাদের কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। পরে সীমান্তের লাইট পোস্টগুলোর বাতি একসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। এর এক ফাঁকে রাতের অন্ধকারে বিএসএফ তাদের নাগরিকদের ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, বিএসএফ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করল, তারা সীমান্তে অযাথা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
মঙ্গলবার রাতে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারি সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন, হাতীবান্ধা উপজেলার তিন সীমান্ত দিয়ে ২৪ জন, পাটগ্রাম উপজেলার তিন সীমান্ত দিয়ে ২৮ জনকে তারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
এদিকে বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৩ জনকে বাংলাদেশ অংশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আজ দুপুরে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ সর্বোচ্চ ২১ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৯৪৭ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিল বিএসএফ।
এদিন দুপুরে মুড়িয়া সীমান্ত থেকে বিএসএফের ঠেলে দেওয়া ২১ জনকে আটক করে বিজিবি বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করেছে। বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মেহেদি হাসান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা সবাই বাংলাদেশি প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের সবার বাড়ি নড়াইল জেলায়।
আগের রাতে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার এনায়েতপুর সীমান্তে ১৩ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। বিজিবি তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। নাম ও পরিচয় যাচাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মঈন হুসেন।
একই রাতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে ৯ নারী-পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয়। কাশিপুর ক্যাম্পের বিজিবির সদস্যরা তাদের আটক করে। গতকাল দুপুরে আটকদের ফুলবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়। আটকদের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার বজরেরখামার এলাকায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে।
ফুলবাড়ী থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, ৯ জনকে ঠেলে দেওয়ার ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বজনদের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প শইন উপজ ল র ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ
পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দেশের ১২ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষানির্ভর তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে স্কিলস ফর ইন্ডাস্ট্রিজ কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রামের (এসআইসিআইপি) আওতায়। এ প্রকল্পে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
আজ সোমবার রাজধানীর পিকেএসএফ ভবনে এসআইসিআইপি ও পিকেএসএফের প্রকল্পের উদ্বোধন ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণার্থী তরুণেরা ১২টি খাতের প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে থাকা-খাওয়ার সব খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণেরা। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারীদের আত্মকর্মসংস্থান বা মজুরিভিত্তিক চাকরির ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে বিদেশে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিকেএসএফ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো সেই চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবে।
পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। এটি একই সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। প্রকল্পের আওতায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্বীকৃত কোর্স অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা সহজেই কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ১২ হাজার ছাড়াও আরও ৮ হাজার ৫০০ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি ২ হাজার এতিম ও দুস্থ তরুণকেও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বক্তব্য দেন।